প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে ঋণ সহায়তার আহ্বান
৩১ আগস্ট ২০২২ ২৩:৫৭
ঢাকা: সারাদেশে অসংখ্য প্রতিবন্ধী নারী আছেন যারা ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে ইচ্ছুক। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাদের জন্য বাধা না হলেও নানারকম সামাজিক ও নীতিগত সহায়তার অভাবে তারা এগিয়ে যেতে পারছেন না। নারী উদ্যোক্তাসহ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নানারকম ঋণ, প্রশিক্ষণ বা প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সেটি নেই। তাই তাদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত নীতিমালা ও ঋণ সহায়তা।
বুধবার (৩১ আগস্ট) অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এ সব কথা উঠে আসে। ইএমকে সেন্টারের সহায়তায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের প্রচারণায় মিডিয়ার ভূমিকা।’
অংশগ্রহণকারী অতিথিরা প্রতিবন্ধকতার শিকার নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে সংবাদমাধ্যম কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে সেটি তুলে ধরেন।
আয়োজনের প্রধান অতিথি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা পারভীন বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা মাথায় না নিয়ে তারা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তা আসলে সমগ্র বাংলাদেশের সফলতার গল্প। এ সব গল্প আমাদের তুলে ধরতে হবে। আর এভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের সমাজ, পরিবার যেভাবে বোঝা মনে করে তা দূর হতে পারে। আমার সঙ্গে তাদের কোনো পার্থক্য নেই এ বিষয়টা তুলে ধরতে হবে। রাষ্ট্রের উচিৎ আর্থিকভাবে তাদেরকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। লোন, প্রণোদনা, আলাদা নীতিমালা, সহজ শর্তে ঋণ ও পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়তা করা।’
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যালবার্ট মোল্লা তার প্রেজেন্টেশনে প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তা ফোরাম তৈরির বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি এসব উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা কি হতে পারে তা তুলে ধরেন।
সমগ্র বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিকভাবে ১১৭ জন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তার মধ্য থেকে ৫০ জনকে বাছাই করে গঠন করা হয় প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তা ফোরাম যাদেরকে অনলাইন ও সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রজেক্ট, বেসরকারি সংস্থা ইএমকে সেন্টার, দারাজ, উই ইত্যাদির সহায়তায় এসব প্রশিক্ষণ ও বাজারজাত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
অ্যালবার্ট মোল্লা বলেন, ‘অনলাইনে কীভাবে ব্যবসা করবে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় পণ্য বিক্রি। আশার কথা হল এদের মধ্যে থেকে অনেকেই দেশে এবং বিদেশে পণ্য বিক্রি করছেন ‘
এ সময় তিনি বেশ কয়েকটি বাধার কথা তুলে ধরেন।
ওয়েবিনারে উপস্থিত নারী উদ্যোক্তাদের কয়েকজন কীভাবে তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সেটি তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের সার্বিক সহায়তার আহবান জানান।
নাটোরের আরেফা পারভীন বলেন, ‘পরিবারের পুরুষ সদস্যদের যেভাবে সাহায্য করা হয়, নারীদের সেভাবে করা হয় না। সংসার-সন্তান দেখাশোনা ও নানারকম বাধা পার হয়েই আমরা বেরিয়ে এসেছি। সন্তানের জন্য চাকরি ছেড়ে এখন ব্যবসা করতে এসেছি কিন্তু সেভাবে সহায়তা পাচ্ছি না। অভিজ্ঞতা না থাকায় পণ্যের সোর্সিং করতে যেয়ে ধোকা খাওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে পণ্য আনা-নেওয়া, বাজারজাত করা ও অন্যান্য কাজ করা অসুবিধা। তাই আমি পরিবার ও সমাজের কাছ থেকে সহায়তা আশা করি।’
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের অষ্টমী মালো সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য তার পণ্যের প্রতি অনেকেই আস্থা রাখতে পারে না। ভালো প্যাকেজিংও করতে পারেন না অর্থাভাবে। প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে তিনি বুঝেছেন যে পণ্য বিক্রি করতে মানসম্মত প্যাকেজিং জরুরি। এছাড়াও ট্রেড লাইসেন্স, টিন ইত্যাদি পেতেও নানারকম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। তাই এসব সমস্যা সমাধানে সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এলবার্ট মোল্লার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনের সহকারী প্রতিষ্ঠাতা মহুয়া পাল। প্রধান অতিথি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও বিশেষ অতিথি নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক শাহনাজ শারমিন। এছাড়াও এক ঝাঁক সাংবাদিক ও প্রতিবন্ধীনারীদের নিয়ে আয়োজিত এই ওয়েবিনারে সমাপনি বক্তব্য দেন ফোরামের অর্থ সংস্থান দাতা ইএমকের পক্ষ থেকে জনাব আয়েশা সিদ্দীকা।
সারাবাংলা/আরএফ/একে