আগস্টে এলো ১৯ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা
১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:১৮
ঢাকা: ডলার সংকটের মধ্যেও পর পর দুই মাসে প্রবাসীরা দুই বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসীরাদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বিদায়ী অর্থবছর রেমিট্যান্স নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই তা অনেকটাই কেটে গেছে। সদ্য বিদায়ী আগস্ট মাসে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ (২.০৩ বিলিয়ন ডলার) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে) ১৯ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। যা গত বছরের আগস্টের চেয়ে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের আগস্টে ১৮১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতির গতি সঞ্চার করবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য আমরা ব্যাংকগুলোকে নানা ধরনের উৎসাহ দিয়েছি— যাতে করে ব্যাংকগুলো দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স আনার পরিমাণ বাড়াতে পারে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে জুলাইয়ের মতো আগস্টেও রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।’
জানা গেছে, আগস্টে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স চলতি অর্থবছরের আগের মাস জুলাইয়ের তুলনায় কিছুটা কম। গত জুলাইয়ে প্রবাসীরা ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বা ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ফলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রেমিট্যান্স এলো ৪১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সদ্য বিদায়ী আগস্টে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৬৪ কোটি ২৫ লাখ ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে এসেছে ৭৫ লাখ ডলার। এছাড়াও বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে এসেছে ২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
আগস্টে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এই ব্যাংকটির মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্স আসে ৪৩ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার, ডাচ-বাংলার মাধ্যমে ১০ কোটি ১৬ লাখ ডলার এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১ হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে রেমিট্যান্স
বিদায়ী ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২ হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে, ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এছাড়া ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম