Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে ১২ বিয়ে করে অবশেষে ধরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৩০

ঢাকা: মো. মামুন ইসলাম (৩০)। পেশায় একজন ওয়ার্কশপ কর্মচারী হলেও ফেসবুকে পরিচয় ছিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে। এ পরিচয়ে ৫০ এর অধিক তরুণীর সঙ্গে গড়ে তোলেন প্রেমের সম্পর্ক। ভিডিওকলে কথা বলার সময় ভিডিও স্ত্রিনশর্ট রেখে তা ভাইরালের ভয় দেখিয়ে মেয়েদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন টাকা।

এমন একজন তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে দিনাজপুরের খানসামা থানাধীন আমতলী বাজার এলাকা থেকে মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও অপারেশনস টিম। তার কাছ থেকে পাঁচটি নকল নিকাহনামা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার বদলির ভুয়া অফিস আদেশের অনুলিপি ও দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম এ সব তথ্য জানান।

মামুনের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মামুনের আসল নাম মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ নারীকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর সবার কাছ থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার মোবাইল ফোনে ৫০ এর অধিক মেয়ের সঙ্গে ভিডিওকলে কথোপকথন ও অসংখ্য ন্যুড ভিডিও পাওয়া গেছে।’

এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ‘মামুন কখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপ-সচিব, কখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কখনো ব্যাংক কর্মকর্তা আবার কখনো ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে একাধিক চাকরিজীবী ও সাধারণ তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরে ওই তরুণীদের সুবিধাজনক স্থানে বদলি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বিদেশ গমনসহ নানান সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।’‘

বিজ্ঞাপন

নিজের আসল পরিচয় গোপন করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতেন মামুন। ইন্টারনেট বা ফেসবুক থেকে তার শরীর ও চেহারার সঙ্গে মিলে যায় এমন শারীরিক গঠনের মুখে মাস্ক পরা কিংবা মুখাবয়ব অস্পষ্ট এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ছবি নিজের ছবি হিসেবে ব্যবহার করে নারীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন তিনি।’

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘সম্পর্কের একপর্যায়ে মামুন নারীদের বিয়ের প্রস্তাব দিতেন। যদি কোনো নারী তার প্রস্তাবে সাড়া না দিতেন, তাহলে আত্মহত্যা করবেন বলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়েতে রাজি করাতেন। পরে বিয়ের ফাঁদে ফেলে নারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করতেন।’

‘এমনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের পর এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন মামুন। তিনি নিজেকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বলে পরিচয় দেন। ধীরে ধীরে তাদের সর্ম্পক গভীর থেকে গভীরতর হয়। তবে মামুন কখনো ওই তরুণীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করতেন না।’

এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ‘বিভিন্ন সরকারি কাজে খুবই ব্যস্ত আছেন অথবা তার ছুটি হচ্ছে না ছাড়াও বিভিন্ন অজুহাতে সরাসরি বিয়ে করতে আসতে পারছেন না বলে জানান মামুন। পরে তরুণীর নামে কাজী অফিসের সিলমোহরযুক্ত ভুয়া কাবিননামা বানিয়ে কুরিয়ার করে দেন। মেয়েটিকে তাতে সই করে নিজের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলতেন।’

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভুয়া কাবিননামায় সই করার কিছুদিন পর মামুন মেয়েটির বাসায় যান ও ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করে কিছুদিন একসঙ্গে বসবাস করেন। সেখান থেকে চলে আসার পর তিনি মেয়েটিকে আপত্তিকর ও অশালীন অবস্থায় ভিডিওকলে আসতে বলতেন।’

তিনি বলেন, ‘আপত্তিকর অবস্থায় মেয়েটির সঙ্গে ভিডিওকলে কথোপকথনের সময় স্ক্রিন রেকর্ড করে নিজের মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখতেন মামুন। পরবর্তীসময়ে তিনি ওই ভিডিওগুলো অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয়-হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করতে থাকেন। একপর্যায়ে মেয়েটির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতেন মামুন।’

‘ভুক্তভোগী মেয়েটি মামুনের প্রতারণার শিকার হয়ে পল্টন থানায় পর্ণোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার পাওয়ার পর সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও অপারেশনস টিম মামুনকে গ্রেফতার করে।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

প্রতারণা ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর