বরেন্দ্র এলাকায় বোরোর জায়গা দখল করছে আউশ
১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৩৮
ঢাকা: পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দেশের বরেন্দ্র এলাকায় বোরো আবাদ কমে এসেছে। সেখানে বোরোর জায়গা দখল করে নিচ্ছে আউশ। গেল ১০ বছরে বরেন্দ্র এলাকায় নতুন করে বোরো চাষ সম্প্রসারিত হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তায় ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপনকালে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং এ কর্মশালার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাই কমিশনার নাদরিয়া সিম্পসন। গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সিএসআইআরও বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন আইডব্লিউএমের নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান।
গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গত এক দশকে বোরো ধানের সম্প্রসারণ কমে এসেছে বা সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে গেছে। বোরো ধানের স্থানে এসেছে আউশ ধান। বিশেষত বরেন্দ্র এলাকায় বিগত ১০ বছরে বোরো ধানের কোন নতুন এলাকা পাওয়া যায়নি।
এতে আরও বলা হয়, বরেন্দ্র অঞ্চলে গত এক দশকে বোরো চাষ সম্প্রসারণ স্লথ হয়ে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বত্র নিচে নেমে যায়নি, বরেন্দ্র এলার মধ্যে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে কমেছে। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার এমমাত্র কারণ নয়। উজানে নদীতে বাঁধ নির্মাণ, শস্য বিন্যাসের পরিবর্তন, জলাভূমি হ্রাস পাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ার কারণেও পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, আবহাওয়ার পরিবর্তন পানির ভারসাম্য ও ভূগর্ভস্থ পানির সহজলভ্যতার ওপর প্রভাব ফেলেছে। তবে দেখা গেছে সেচের পানি ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রায় উন্নতি আনতে সাহায্য করেছে।
গবেষণায় বলা হয়, এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে কতটুকু পানি লাগে তা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কলা হয় ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে- এটি একটি ভুল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ সালে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ৬৬১ লিটার পানি লেগেছে। আর ২০১৬-১৭ সালে লেগেছে ৫৮৪ লিটার।
আরও দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা বোরো ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বেশি দূষ্পাপ্র এলাকায় সেচ খরচ বেশি হয়, উৎপাদন কম হয় এবং কৃষকের লাভ কম হয়। পানির স্তর ধরে রাখতে ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ ও রিজার্ভের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সেচের জন্য ব্যবহারযোগ্য পানির (বিশেষত ভূগর্ভস্থ পানি) টেকসই স্তর নির্ধারণ এবং পানির ব্যবহারের পরিবর্তনের উপর নারী ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রভাবের মূল্যায়নের জন্য গবেষণাটি করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সিএসআইআরও’র সাথে যৌথভাবে গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে ইনস্টিটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বারিন্দ মাল্টিপারপাস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম