‘দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করো, তার ওপর কর ধরো’
২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায় প্রত্যাহার দাবি করে পাঁচবছর পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনে নেমেছে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। তাদের বক্তব্য- ‘গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স আইন বাতিল করো/দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করো তার ওপর কর ধরো।’
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর কদমতলী দস্তগীর সুপার মার্কেটের সামনে জনসভা করে সংগঠনটি। এরপর বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
একমাস ধরে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায় ঠেকাতে জনসংযোগের পর আয়োজিত প্রথম জনসভায় পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, ‘বর্তমান মেয়র নির্বাচনের আগে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করতে আমার বাড়িতে আসেন। সেদিন উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি হোল্ডিং ট্যাক্সে হাতে দেবেন কি না? জবাবে তিনি বলেছিলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী আমার নেতা। তিনি যেখানে হাত দেননি সেখানে হাত দিয়ে কী আমার নেতাকে অসম্মান করব। চেয়ারে বসেই উনি সব ভুলে গেছেন। আমরা উনাকে শ্রদ্ধা সম্মান করি। শহরে সবাই আপনার আত্মীয়-স্বজন। আমাদের উপর করের বোঝা চাপাবেন না।’
তিনি নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা বর্ধিত হারে হোল্ডিং ট্যাক্স মেনে নিয়ে আপিল করবেন না। আপিলের নামে প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুষ দাবি করছে সিটি করপোরেশনের লোকজন। বলছে- টাকা দিলে দুই দিনে গৃহকর কমিয়ে সব ঠিক করে দেবে। মেয়র সাহেব আপনাকে মেয়র করে কী আমরা অপরাধ করেছি?’
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমির উদ্দিন বলেন, ‘অন্যায্য এক টাকা বাড়তি গৃহকরও চট্টগ্রামের মানুষ দেবে না। এই ট্যাক্স আমরা নিতে দেব না। বৃহত্তর আন্দোলন হবে।’
পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী বলেন, ‘মেয়র সাহেব বলছেন তিনি কর বাড়াচ্ছেন না, করের আওতা বাড়াচ্ছেন। উনি স্পষ্ট মিথ্যা বলছেন। মিথ্যা বলার মাধ্যমে উনি শপথভঙ্গ করেছেন। আমি মেয়রকে বলতে চাই- চট্টগ্রামের মানুষ শান্ত আছে, তাদের শান্ত থাকতে দিন। অবিলম্বে অন্যায্য হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় বন্ধ করুন। না হলে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামবাসী আপনার বিরুদ্ধে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।’
চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি বলেন, “এক পশলা বৃষ্টি হলে এক হাঁটু পানি হয়। কী সেবা দেন যে, বাড়ি ভাড়ার ওপর ইনকাম ট্যাক্স দেবার পর আবার ট্যাক্স দিতে হবে? এই আইন বাতিল করুন। অন্যথায় আগামীতে আন্দোলন আরো জোরদার করে এই গনবিরোধী আইন বাতিলে বাধ্য করা হবে।’
জনসভা থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন চসিকের সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক, শ্রমিক নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম, হাজী নুরুল ইসলাম, হারুনুর রশিদ, হাসান ইমরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, ইসমাইল মনু, মো. আনোয়ার, মুজিবুল হক চুন্নু, বিশুময় দেব।
উল্লেখ্য, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়ন করে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নামেন সাবেক মেয়র (বর্তমানে প্রয়াত) এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে কর আদায় স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় চসিক। এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়।
তখন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘গণহারে গৃহকর বাড়ানো হবে না, শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে।’
কিন্তু সম্প্রতি পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু হলে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে পাঁচ বছর পর একই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’।
সারাবাংলা/আরডি/একে