Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিন গ্রুপে বিভক্ত জাপা, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় নেতাকর্মীরা

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৪৫

ঢাকা: জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে বিএনপিও জাতীয় পার্টিকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আবার এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করার মতো সাংগঠনিক শক্তি ও জাতীয় পার্টি নেই। এরইমধ্যে দলে তিনটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে খোদ দলের নেতাকর্মীরাই শঙ্কা প্রকাশ করছেন। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান কি হবে তা নিয়েও একমত হতে পারছেন না দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতাকর্মী জানান, বর্তমানে দলে তিনটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। অন্য গ্রুপে বেগম রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। অপর গ্রুপে এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের।

দলের এই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় সারাদেশের নেতাকর্মীরা হতাশাগ্রস্ত। তাদের প্রশ্ন, জাতীয় পার্টি কোন পথে যাচ্ছে। দলটির ভবিষ্যৎ কি একেবারেই অন্ধকার? এমন প্রশ্ন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে পকেট বৈঠক এবং কানাঘুষা।

দলের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের সম্প্রতি বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলের বিয়েতে অংশ নেন। সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এই দুই নেতার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও ভিডিও কলে কথা হয়েছে। ওই সময় তারেক রহমান জাতীয় পার্টিকে আগামী নির্বাচনে বিএনপির জোটে থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন।

জি এম কাদেরও প্রস্তাবে অনেকটা রাজি হয়ে আসন ভাগাভাগির পাল্টা প্রস্তাবও দিয়েছেন তারেক রহমানের কাছে। জিএম কাদের তার প্রস্তাবে বিএনপির কাছে ১০০টি আসন, মন্ত্রী পরিষদে আট জন সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের পদ চেয়েছেন।

একই প্রস্তাব বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীরের কাছে দেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। জি এম কাদেরের এসব প্রস্তাব বিএনপি বিবেচনায় রেখেছে বলে জানান দলের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানায়, বিএনপির সঙ্গে এ ধরনের প্রস্তাব আদান-প্রদানের পরেই জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের তেলসহ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় পার্টির কাকরাইল অফিসের সামনে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করেন। ওই সমাবেশ দলের কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য নেতারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। জিএম কাদেরও তার বক্তব্যে সরকারকে পদত্যাগ করার জন্য বলেন।

সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য বিএনপির সঙ্গে আঁতাতের বিষয়ে সরকারের কাছেও তথ্য রয়েছে। এ কারণে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে জি এম কাদেরকে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রটি বলেছে, জি এম কাদেরের ভাষায় বর্তমান সরকার অসাংবিধানিক অবৈধ। জিএম কাদেরের তাহলে সংসদে থাকা উচিত নয়। এজন্য তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে থেকে জি এম কাদেরের অন্যান্য জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়।

জাতীয় পার্টির দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, দলের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। এরমধ্যে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ আগামী নভেম্বরে দলের কাউন্সিল ডেকেছেন। এই কাউন্সিল থেকেই জি এম কাদেরের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।

নাম গোপন রাখার শর্তে সারাবাংলাক তারা জানান, বর্তমানে তারা জি এম কাদেরের সঙ্গেই আছেন। ঠিক নভেম্বরে দলের সব এমপিসহ প্রেসিডিয়াম সদস্যরা বেগম রওশন এরশাদের দিকেই ভিড়ে যাবেন।

তাদের অভিমত, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদ স্বৈরাচার থেকে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের নেতা হয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কার্যক্রমে জাতীয় পার্টি আগামীতে বিরোধী দলে থাকতে পারবে কিনা সন্দেহ। জি এম কাদেরের পরামর্শ নিয়ে দল পরিচালনা হলে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব ধরে রাখতে বেগম রওশনের সঙ্গে নেতৃত্বে সামনে আগাতে হবে। বেগম রওশন এরশাদ অসুস্থ হলেও তাকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রয়োজনে দলের অনেক বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান আছেন, তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে রাখা হতে পারে।

একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যরা জানান, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদে জি এম কাদেরকে মনোনীত করতে স্পিকারের কাছে যে চিঠিটা দেওয়া হয়েছে তা বর্তমান পরিস্থিতির কারণে। কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য স্পিকারের দফতরে গিয়ে চিঠিটি দিয়েছেন। যারা স্পিকারের কাছে গেছেন, তারাই জি এম কাদেরের সঙ্গে নেই।

দলের অপর একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য অভিযোগ করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিএম কাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্য বেশি করেন। দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন পেতে পারে এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে জিএম কাদের সাহেব উপহার নিয়ে থাকেন। এমন একাধিক তথ্যপ্রমাণ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ নেতাকর্মীদের কাছে রয়েছে। অথচ আগামী নির্বাচনে জি এম কাদের সাহেব তার নিজের আসনটি ধরে রাখতে পারবেন কিনা সন্দেহ। এই অবস্থায় তিনি তার অস্তিত্ব ধরে রাখতে বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে যাচ্ছেন। অথচ মহাজোটে জাতীয় পার্টি যোগদানের আগে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে চরম অপমান করেছিলেন। জেলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এরশাদের চোখের পানি আমরা দেখেছি। একপর্যায়ে এরশাদ আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। মহাজোটে না গেলে এরশাদকে জেলে যেতে হতো। ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।’

এসব বিষয় নিয়ে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘এসব তথ্য ভুয়া। জাতীয় পার্টি এখন পর্যন্ত এককভাবে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনের মাঠে লড়াই করবে। তবে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি পরিবেশের উপর নির্ভর করে জোটগত ভাবে নির্বাচন করার পদক্ষেপ নেবে। সে জোট যে কারও সঙ্গে হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ অসুস্থ, তার দ্বারা রাজনৈতিক দল পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যেকোনো দল একটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। দলের গঠনতন্ত্র থাকে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বেগম রওশনের কাউন্সিল ডাকার সুযোগ নেই।’

জাতীয় পার্টির একজন এমপি নাম গোপন রাখার শর্তে জাপার সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আসলে কোন পথে যাচ্ছে,এর উত্তর দলের বর্তমান চেয়ারম্যানও দিতে পারবেন না। সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও

জাতীয় পার্টি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর