শহিদ মিনারে গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:১১
ঢাকা: কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধায় ভূষিত হলেন প্রখ্যাত গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সেখানে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। এসময় রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ভিড় করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য এই গীতিকবির প্রতি ‘জাতির শ্রদ্ধাঞ্জলি’র আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এতে জোট নেতারা ছাড়াও ছিলেন- গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, শিল্পী ও সাধারণ মানুষ। ফুল দেওয়া শেষে পাশে রাখা শোকবইতে নিজের অনুভূতির কথা জানান অনেকে।
শ্রদ্ধা জানাতে আসেন শহিদ মিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ফুল দেন বাংলাদেশ যুবমৈত্রী, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ গীতিকারের অসংখ্য গুণগ্রাহী।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দেন কেন্দ্রীয় নেতা অসীম কুমার উকিল, আফজাল হোসেনসহ অন্যরা। বিএনপির পক্ষ থেকে ফুল দেন দলের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের আশরাফ উদ্দীন আহমেদ উজ্জ্বল, বাবুল আহমেদসহ অন্যান্য।
উপস্থিত ছিলেন- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সুরকার আলাউদ্দীন আলী, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, সুরকার শেখ সাদী, সঙ্গিতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, ইয়াকুব আলী খান, মনির খান, এস আই টুটুলসহ আরও অনেকে।
শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্ররা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। কেউ কেউ এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলছিলেন, ‘গাজী মাজহারুল আনোয়ার এভাবে চলে যাবেন সেটি কেউ ভাবতেও পারেননি। অনেকের সঙ্গেই দীর্ঘ কর্মজীবনের সূত্রে পারিবারিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।’
প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এই দিন এভাবে দেখতে হবে কল্পনাও করিনি। গাজী ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক পঞ্চাশ বছরের উপর। এত এত স্মৃতি, কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি। তার লেখা বিশ হাজারের মত গানের অন্তত ছয় থেকে সাত হাজার গান আমিই গেয়েছি। আমরা ছিলাম একটা পরিবারের মত। আল্লাহ্ যেন তাকে বেহেশতের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় স্থান দেন সেই কামনা করি।’
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে সবার প্রিয় গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আপনি সশরীরে আমাদের থেকে বিদায় নিলেও বাংলাদেশের শিল্প ও সংগীতের ইতিহাসে আপনি চিরজাগরুক থাকবেন। আপনার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।’
সুরকার শেখ সাদী বলেন, ‘একজন শিল্পী আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন কিন্তু তাকে সম্মান দেখাতে যেভাবে এসেছেন সবাই সেটি দেখে একজন শিল্পী হিসেবে আনন্দিত বোধ করছি। জাতির প্রতি কৃতজ্ঞতা। গাজী মাজহারুল আনোয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি শুধুমাত্র একজন গীতিকবিই ছিলেন না, চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনায়ও রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর।’
চিত্রনায়ক আশরাফুল উদ্দীন আহমেদ উজ্জ্বল বলেন, ‘বাংলাদেশের গানের জগতে যারাই নানাভাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের সবার জীবনেই গাজী মাজহারুল আনোয়ারের অবদান রয়েছে। এবং তার এই অবদানের জন্যই তার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। গানের ভুবন থেকে যখন চলচ্চিত্রে পা দিলেন, সেখানেও তিনি সফল। বাংলাদেশের সব বড় বড় শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালকদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি।’
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের চলে যাওয়া যেন বাংলার আকাশ থেকে নক্ষত্রের পতন। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা গুণগ্রাহীরা এভাবেই বলছিলেন। সেই সঙ্গে তারা এও বলেন। যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের নাম।
সারাবাংলা/আরএফ/এমও