‘ভবন উদ্বোধনের চেয়ে গানের লাইন ঠিক করা বেশি জরুরি ছিল তার কাছে’
৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:৪৮
ঢাকা: ‘বেইলি রোডের এক স্টুডিওতে গান রেকর্ডিং করতে গিয়ে দেখি, গানের একটি লাইন বুঝতে পারছি না। তখন ফোন দিই গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে। তিনি তখন গাজীপুরে একটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করতে গিয়েছেন। কিন্তু আমার ফোন পেয়ে সেই কাজ ফেলে রেখেই বেইলি রোডের রেকর্ডিং স্টুডিওতে চলে আসেন গীতিকার। ওই সময় আমি তাকে প্রশ্ন করি, কাজ শেষ না করেই কেন চলে এলেন? তখন প্রতিত্তুরে গাজী মাজহারুল আনোয়ার জানান, ভবন উদ্বোধনের চেয়ে গানের লাইন ঠিক করা বেশি জরুরি। যেহেতু শিল্পী ভাড়া করা স্টুডিওতে অপেক্ষায় আছেন। পরে বেইলি রোডে কাজ শেষ করে তিনি আবারও গাজীপুর ফিরে যান।’— এভাবেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তাকে নিয়ে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের কাছে স্মৃতিচারণ করছিলেন শিল্পী মনির খান।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনির খান বলেন, ‘সঙ্গীত ও সৃষ্টিপাগল একজন মানুষ ছিলেন তিনি। তাই অপেক্ষমাণ লোকজনকে ফেলে গাজীপুর থেকে ঢাকা চলে আসেন তিনি।’ মাজহারুল আনোয়ারের হাজার বিশেক গানের মধ্যে শতাধিক গান গেয়েছেন মনির খান। প্রিয় সঙ্গীতকারের মহাপ্রয়াণে তাই ছুটে এসেছেন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে, শিল্পীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। তিনি বলেন, ‘আমি তার সন্তানতুল্য ছিলাম। প্রায় প্রতিদিনই ফোনে কথা হতো। একদিন বা দুইদিন কথা না হলেই অস্থির হয়ে যেতেন। কেন ফোন দিইনি জানতে চাইতেন।’
মনির খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় তার লেখা গান মেশিনগানের ভূমিকা পালন করেছে। যুদ্ধের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সেই মুক্তিযোদ্ধা, কলমযোদ্ধা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। দেশ হারালো একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আর আমরা হারালাম আমাদের একজন অভিভাবক। তার অসংখ্য কাজই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। আর একজন ক্ষুদ্রকর্মী হিসেবে আমাদের চেষ্টা থাকবে, আজীবন তার কাজগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা।’
মনির খান বলেন, ‘মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালোলাগার কাজটি করে যেতে চেয়েছিলেন গাজী কাকু। মারা যাওয়ার আগের দিনও গান লিখেছেন। তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তার শেষ ইচ্ছা ছিল সমস্ত সৃষ্টির কপিরাইট করে যাওয়া। কিছুদিন আগেই কপিরাইট অফিসে গিয়ে দাবি-দাওয়াও তুলে ধরেছিলেন। সেখানকার লোকজন তার কথা আন্তরিকতার সঙ্গেই শুনেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। আমি আশা করি, তারা অচিরেই তার দাবিটুকু পূরণ করে তার সঙ্গীতের কপিরাইট বুঝিয়ে দেবেন।’
উল্লেখ্য, রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যারা যান একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট এই সুরকার ও গীতিকার। গাজী মাজহারুল আনোয়ার বিশ হাজারের উপর গান লিখেছেন।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম