শিগগিরই তিস্তা চুক্তি সই হবে— আশা প্রধানমন্ত্রীর
৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:২৪
নয়াদিল্লি: ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ দু’টির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রতিবেশি কূটনীতির রোল মডেল বলে অভিহিত করেছেন। সেইসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সমাধান করা অন্যান্য অনেক সমস্যার মতোই তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তিসহ সব অমীমাংসিত সমস্যা শিগগিরই সমাধান হবে।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভারতের হায়দারাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার প্রতিনিধি দল এবং ভারতের প্রতিনিধি দলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সই হওয়া সাতটি সমঝোতা স্মারক বিনিময় প্রত্যক্ষ করার পর জারি করা এক বিবৃতিতে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত এক দশকে উভয় দেশই বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দুটি দেশ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় অনেক অমীমাংসীত ইস্যু সমাধান করেছে। এবং আমরা অবিলম্বে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সই করাসহ সব অমীমাংসীত ইস্যুর সমাধান আশা করছি।’
দুই দেশের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানিবন্টন নিয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিসহ ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনের মতো সব সমস্যার সমাধান করা হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি ও তার ভারতীয় সমকক্ষ নরেন্দ্র মোদি আরেক দফা ফলপ্রসূ আলোচনা শেষ করেছেন এবং এর ফলাফল উভয় দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বৈঠক করেছি। আগামী দিনগুলোতে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আমরা দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আলোচনার সময় তারা অঙ্গীকার বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় সম্পর্কে এবং পারস্পরিক কল্যাণের লক্ষ্যে একে অপরের অগ্রাধিকারগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সংযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সীমানা এবং লাইন অব ক্রেডিট সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব তৈরি করে উভয় দেশ পারস্পরিক স্বার্থে ক্রমবর্ধমান ব্যাপক বিষয়ে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং আমাদের দুই দেশে ও এ অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছি। বাংলাদেশ ও ভারত যদি অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তাহলে এটি শুধু দেশগুলোর জন্যই নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৫৪টি অভিন্ন নদী এবং চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তবেষ্টিত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত কল্যাণে বদ্ধপরিকর।’ তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বা গুরুতর আহত ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈনিক/কর্মকর্তাদের সরাসরি বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ দেওয়া হবে।’ বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও জনগণের অমূল্য সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা লাভের পর থেকে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস ও সংস্কৃতি, পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং অব্যাহত সহযোগিতায় জোরদার হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন, যা প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিকতর গতি সঞ্চার করে চলেছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী উদযাপন ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’র সফল সমাপ্তির জন্য ভারত সরকার এবং দেশটির জনগণকে অভিনন্দন জানান। [সূত্র: বাসস]
সারাবাংলা/পিটিএম