সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা: সিএমপি কমিশনার
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িক হামলা কিংবা সম্প্রীতি নষ্টের বিরুদ্ধে পুলিশ ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ অবলম্বন করবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিএমপি কমিশনার একথা জানিয়েছেন।
১ অক্টোবর থেকে সনাতন সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে নগরীর দামপাড়ায় সিএমপির মাল্টিপারপাস শেডে আয়োজিত সমন্বয় সভায় সিটি করপোরেশন, পিডিবি, ওয়াসা, সিভিল সার্জনের কার্যালয়সিহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থা এবং মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তারা ছিলেন।
সভায় বক্তব্যে ও পরবর্তীতে ব্রিফিংয়ে সিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, দুর্গাপূজায় এবার ‘সার্বজনীন নিরাপত্তা বলয়’ তৈরির কৌশল নির্ধারণ করেছে সিএমপি। এ জন্য থানাভিত্তিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি করা হচ্ছে, যেন সনাতন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ছাড়াও সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা থাকবেন। থানা কমিটিতে প্রধান থাকবেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ওই জোনের উপ-কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এবং সহকারী কমিশনার থাকবেন উপদেষ্টা হিসেবে। এছাড়া মণ্ডপভিত্তিক কিছু কমিটিও করা হচ্ছে, যেখানে থানার ডিউটি অফিসার সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্গাপূজায় আমরা অসাম্প্রদায়িক একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই। যারা আমাদের পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চাই, তাদের প্রতিরোধ করে এগিয়ে যেতে হবে। ‘প্রতিমা ভাংচুর বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেজন্য প্রতিমা যেখানে তৈরি হয়, সেখানে আমরা অলরেডি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতিমা যারা তৈরি করেন, তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’
গত বছরের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলার পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘গতবছর কিছু সমস্যা হয়েছে। সেটা আমাদের জন্য একটা অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এবার আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছি। ফেসবুক নজরদারির বিষয় আছে, সেটা করছি। উৎসবের সময় ইন্টারনেট স্লো করার প্রস্তাব এসেছে, সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় বিবেচনা করবে। সকল বিষয়ে নজর আছে, গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো নেতিবাচক তথ্য নেই।’
‘যদি প্রতিমা ভাংচুর হয়, হামলা হয় সেক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা দায়ের হবে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে সিএমপির অবস্থান জিরো টলারেন্স। যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রশ্ন আসে কিংবা সাম্প্রদায়িক হামলার প্রশ্ন আসে কিংবা সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশ সরকারেরও সেক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করে। এক্ষেত্রে সিএমপিও শূন্য সহিঞ্চুতা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
চট্টগ্রাম নগরীতে গতবছর যে গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পূজামণ্ডপে হামলা করেছিল, তাদের এবার নজরদারিতে রাখা হবে বলেও জানান সিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম নগরীতে ২৮২টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা আয়োজনের তথ্য দিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তালিকা আবার হালনাগাদ করা হবে, কোনো মণ্ডপ যেন আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতার বাইরে না থাকে। আমরা পূজামণ্ডপকে অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ- এ তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি। আশা করছি, সার্বিক সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা নিরাপদে অনুষ্ঠিত হবে।’
চার স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দারা একটি স্তরে কাজ করবেন, পোশাকধারী পুলিশরা একটি স্তরে কাজ করবেন, কুইক রেসপন্স টিম ও সোয়াট টিম থাকবে, ইলেকট্রনিক ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে আমাদের টিম থাকবে। এর চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা এবার অংশগ্রহণমূলক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছি। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমরা সবাইকে সম্পৃক্ত করতে চাই।’
তবে কী পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন থাকবে সেটা কৌশলগত কারণে বলতে রাজি হননি সিএমপি কমিশনার।
দুর্গাপূজায় সিএমপির পক্ষ থেকে পূজামণ্ডপগুলোকে ৩২ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের সময় বেঁধে দিয়েছে সিএমপি।
বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ‘মণ্ডপে আগুন প্রতিরোধে ব্যবস্থা থাকতে হবে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগাবেন। আর্চওয়ে রাখবেন। পুরুষ দর্শনার্থী ও মহিলা দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশে ও বের হওয়ার জন্য পৃথক ব্যবস্থা রাখবেন। অহেতুক দোকানপাট বসিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। আমরা সিএমপিতে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি করছি। আমাদের পুলিশ সদস্য কিছু কিছু মণ্ডপে দেব। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কোথাও কোথাও সার্বক্ষণিক এবং কোথাও কোথাও মোবাইল টিমের মাধ্যমে নিরাপত্তা দেব। সেক্ষত্রে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পুলিশ সদস্যদের আপ্যায়নের বাধ্যবাধকতা নেই। আপনারা এ বিষয়ে কোনো চাপ অনুভব করবেন না।’
‘শৃঙ্খলা রক্ষায় আপনাদের নিজেদেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। জনচলাচল ও যান চলাচল যেন বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না। স্বেচ্ছাসেবক রাখবেন প্রতিটি মণ্ডপে। আয়োজকদের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের গেঞ্জি, ব্যাচ বা কার্ড দেবেন। তারা যেন পুলিশের সাথে মিলেমিশে কাজ করেন। মহিলা স্বেচ্ছাসেবকও রাখতে হবে। সকল মণ্ডপে না হলেও কিছু কিছু মণ্ডপে মহিলা পুলিশ আমরা দেব।’
সভায় সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এম এ মাসুদ, আ স ম মাহতাব উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে