Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রওশনকে সরাতে স্পিকারকে ভুল চিঠি, জবাব না পেয়ে হতাশ কাদের

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৩৭

ঢাকা: বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে স্পিকারের দফতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিন কার্যদিবসে ওই চিঠির বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। তিন কার্যদিবস শেষ হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, বৈঠক ডাকাসহ বৈঠকের রেজুলেশনের স্বাক্ষরে ত্রুটি থাকার কারণে স্পিকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। ফলে স্পিকারের দফতর থেকে জি এম কাদেরকে সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, স্পিকার ড. শিরীন শারমিনও দেশে নেই। তিনি উইমেন স্পিকার্স অব পার্লামেন্ট সামিটে যোগ দিতে উজবেকিস্তানে তাসখন্দে গেছেন। ফলে স্পিকারের সঙ্গেও জি এম কাদের যোগাযোগ করতে পারছেন না। এতে আরও হতাশায় ভুগছেন জি এম কাদের।

বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে স্পিকারের কাছে দেওয়া চিঠি নিয়ম অনুযায়ী ডাকা হয়নি। বৈঠক ডাকা থেকে শুরু করে রেজুলশেনে স্বাক্ষর পর্যন্ত রয়েছে তিন গুরুত্বপূর্ণ ভুল।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদীয় দলের বৈঠক আহ্বানে চিঠি দিয়ে থাকেন সংসদীয় দলের চিফ হুইপ। চিপ হুইপ নিজেই উপনেতা জি এম কাদেরের নির্দেশে দলীয় এমপিদের চিঠি দিয়েছেন। কী বিষয় বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে সে বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ থাকতে হবে।

চিপ হুইপের দেওয়া চিঠিতে লেখা ছিল গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এমপিদের দেওয়া চিঠিতে বৈঠকের এজেন্ডার বিষয়টি উল্লেখ করার বিষয়টি নিয়মে রয়েছে। বিরোধীদলের নেতা থেকে রওশনকে বাদ দেওয়ার কথা এজেন্ডায় লেখা হয়নি।

জি এম কাদের কৌশলে বিরোধীদলের নেতাকে বাদ দেওয়ার কথাটি এমপিদের চিঠিতে লিখতে দেননি। কারণ এ কথাটি লেখা থাকলে কোনো কোনো সংসদ সদস্য হয়তো বৈঠকে অংশ নিতেন না।

বৈঠকে রেজুলেশন লেখা দায়িত্ব চিপ হুইপের। কিন্তু তিনি রেজুলেশন লেখেননি। লিখেছেন দলটির মাহসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। এ ছাড়া সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয় ৩১ আগস্ট। কিন্তু ওইদিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১ সেপ্টেম্বর। এমনকি ৩১ তারিখ বৈঠক না হলেও তা মুলতবিও করা হয়নি।

রেজুলেশনে স্বাক্ষর করার কথা উপনেতা জিএম কাদেরের। কারণ তিনি সংসদীয় দলের বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছেন। অথচ তিনি রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেননি। স্বাক্ষর করিয়েছেন চিফ হুইপকে দিয়ে। এ সব অনিয়মের কারণে স্পিকার এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ সদস্য রত্না আমিন রেজুলেশনে স্বাক্ষর না করার কারণে ঘটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।দলীয় সংসদ সদস্যরা জানান, রত্না আমিন রেজুলেশনে স্বাক্ষর করতে চাননি। এতে জি এম কাদের ক্ষুব্ধ হন রত্না আমিনের ওপর। এ সময় জিএম কাদের অসংসদীয় ভাষায় কথা বলেন। তিনি নাকি এক পর্যায়ে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’

জি এম কাদেরের আচরণে উপস্থিত জাপার সংসদ সদস্যরা ক্ষুব্ধ হন। এ সময় উপস্থিত এমপিরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘ছি, ছি’ বলে প্রতিবাদ জানান। পরে খবরটি ভিন্ন সূত্রে সংসদ নেতাসহ সংসদ সদস্যদের কাছে পৌঁছে যায়।

জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, জিএম কাদের আপদমস্তক একজন স্বৈরাচার। তার আচরণেই ফুটে ওঠে সবকিছু। এ জন্য হুসেইন মুহম্মদ তাকে সহ্য করতে পারতেন না। দল থেকে কয়েকবার শোকজও পেয়েছিলেন তিনি।

এদিকে, বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডেকেছেন। ২৬ নভেম্বর এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ নীতি বিচ্যুতি হয়ে এবং দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড, পদবাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার কারণে জাতীয় পার্টির শক্তভাবে হাল ধরতে তিনি এই কাউন্সিল ডেকেছেন।

রওশন এরশাদ দেশে ফিরেই সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকবেন। এই বৈঠকে যে সব দলীয় সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকবেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, রওশনপন্থী নেতাকর্মীদের যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের জন্য জাতীয় পার্টির পুরনো অফিস (বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে) নেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভবনটি উদ্বোধন করা হবে। কাউন্সিল শেষ হলে তারা কাকরাইল ও বনানী অফিসে উঠবেন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে/পিটিএম

জাতীয় পার্টি জিএম কাদের রওশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর