Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প: ঋণের টাকায় দামি গাড়ি কেনার প্রস্তাব

জোাসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৩১

ঢাকা: সরকারি ব্যয়ের কৃচ্ছ্রসাধনের এই সময় ঋণের টাকায় গাড়ি কেনার আয়োজন করা হচ্ছে। মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে কেনা হবে ৬টি দামি জিপ। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রতিটি গাড়ির দাম ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। ‘সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় গাড়ি কেনার এ প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও আছে বিদেশ সফরের ব্যবস্থা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৭২ কোটি ৩২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ২৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ২ হাজার ৬০৪ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। গত ৩০ আগস্ট জারি করা ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ভৌত অবকাঠামো বিভাগ জানায়, সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়কটি চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণের জন্য মোট ৩ হাজার ৮৭২ কোটি ৩২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে চলতি বছরের জুলাই হতে ২০২৭ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হতে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত হয় পিইসি সভা। ওই সভায় সওজ অধিদফতরের প্রতিনিধি বলেন, সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়কটি বিসিআইএম করিডোর এবং সাসেক রোড করিডোর-৫ এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের ইউনান প্রদেশ, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকের সেভেন সিস্টার্স এর মধ্যে এই বিসিআইএম করিডোর সংযোজন স্থাপন করবে। সাসেক রোড করিডোর-৫ মধ্য ও উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশকে ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করবে। এছাড়া সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি আঞ্চলিক সংযোগ করিডোর বিবিআইএন কার্গো রুটের অন্তর্ভুক্ত একটি উপ-প্রকল্প। এই আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক করিডোরগুলো বেশ কয়েকটি স্থল ও সমুদ্র বন্দরে আন্তর্জাতিক যান চলাচল নিশ্চিত করবে। করিডোরগুলোর মাধ্যমে পণ্যের পাশাপাশি যাত্রীদের আন্তসীমান্ত চলাচল প্রসারিত হবে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ৪২ দশমিক ৯৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি সিলেট শহরের কীন ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কদমতরী থেকে শুরু হয়ে ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন শেওলা স্থলবন্দরে শেষ হয়েছে। এটি সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, গোপালগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করেছে। সড়কটি জাতীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক। এটি দুই লেন বিশিষ্ট এবং বিদ্যমান প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার। সড়কের এনুয়াল এভারেজ ডেইলি ট্রাফিক (এএডিটি) ১২ হাজার ১৫৮। এএডিটির তুলনায় সড়কের বিদ্যমান প্রস্থ কম হওয়ায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে, যা শেওলা স্থলবন্দরের আন্তসীমান্ত বাণিজ্য এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কৃষি বিকাশের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সভায় বলা আরও হয়, প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিনিধি বলেন, এই প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে চলতি বছরের ২৯ মে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা হয়। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে ৭৫৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন করা হলে ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত করা হবে। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতি ঋণ সহায়তার হালনাগাদ পরিমাণ ইআরডি হতে সংগ্রহ করে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে উল্লেখ করার বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করেন।

পিইসি সভায় আরও বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় ১৯৪ দশমিক ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণে ৪৯৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং পুনর্বাসনে ২৫ কোটি টাকার প্রাক্কলন করা হলেও জেলা প্রশাসকের কার্য়ালয়ের প্রত্যয়ন পত্র ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে সওজ অধিদফতরের প্রতিনিধি বলেন, বিশ্বব্যাংকের সেফগ্রাউন্ড পলিসি মোতাবেক পরামর্শক মৌজার লেনদেন করা বাজার দর, রেকর্ড করা রেট, বর্তমান বাজারদর এবং প্রত্যাশিত বাজার দর সংগ্রহ করে প্রকারভেদে বিভিন্ন ধরনের ভূমির গড় রেইটের ভিত্তিতে এনজিও ভূমির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।

প্রকল্পে বিভিন্ন পরামর্শক সেবা খাতে মোট ১০৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে তাই সভায় বলা হয়। মাত্র ৪২ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য এত বেশি পরিমাণ পরামর্শক সেবার ক্রয়ের বিষয়টি যৌক্তিক নয় বলে সভায় মত দেওয়া হয়। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি জিপ, ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি পিক-আপ, ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মাইক্রোবাস এবং ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি মোটরসাইকেল ক্রয়ের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে সভায় তুলে ধরা হয়। অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের জনবল নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ড্রাইভারের সংখ্যার ভিত্তিতে যানবাহনের সংখ্যা ও ব্যয় নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট, গ্যাস ও জ্বালানির ব্যয় নির্ধারণ করার বিষয়ে সভায় মত দেওয়া হয়।

অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণে সরকারি খাতে ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং স্থানীয় প্রশিক্ষণে সরকারি খাতে ৩০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে, যা যৌক্তিকভাবে কমানো যেতে পারে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ব্যয় ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা হতে কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে প্রশিক্ষণের বিষয় ও অংশগ্রহণকারী বিভাগ সংস্থাগুলোর প্রতিনিধির সংখ্যাসহ পুনর্গঠিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সভায় সুপারিশ দেওয়া হয়।

প্রকল্প থোক হিসেবে রাজস্ব খাতে গাড়ি ভাড়া বাবদ ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে সভায় বলা হয়েছে। মূলধন খাতে গাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাব করা হলেও রাজস্ব খাতে গাড়ি ভাড়ার সংস্থান যৌক্তিক নয়। রাজস্ব খাতে গাড়ি ভাড়া বাবদ প্রস্তাবিত ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার পরিবর্তে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রাক্কলন করাসহ ডিপিপিতে একমত পোষণ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে এত টাকা দিয়ে এতগুলো গাড়ি কেনার কেন প্রয়োজন হলো সেটি আরও বিশ্লেষণ করা দরকার ছিল। কেননা সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে গাড়ি না কেনা। একান্ত প্রয়োজন হলে কেবল কেনা যেতে পারে। সেটিও প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত পিকআপসহ অন্যান্য গাড়ি। ঋণের অর্থে এরকম গাড়ি কেনার বিষয়টি আরও কঠোরভাবে দেখা উচিত।

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর