শোক ও শ্রদ্ধায় রানি এলিজাবেথকে স্মরণ করলেন বিশ্বনেতারা
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:৩৪
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। রানির কর্তব্যবোধ, দৃঢ়তা এবং একইসঙ্গে তার হাস্যরস এবং সহানুভূতিশীলতাকে গভীরভাবে সম্মান জানিয়েছেন তারা। ৯৬ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। খবর বিবিসি।
ব্রিটেনের রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, তিনি ‘একজন সহানুভূতিশীল’ রানি, যিনি ‘ফ্রান্সের বন্ধু’ ছিলেন।
এক বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘অনুগ্রহ, কমনীয়তা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তার রাজত্ব’ দিয়ে ‘বিশ্বকে মোহিত করেছিলেন’ রানি।
রানির সঙ্গে কয়েকবার সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বারবার তার আন্তরিকতা দেখে অবাক হয়েছেন তিনি। যেভাবে তিনি মানুষকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ দান করেছিলেন এবং কীভাবে তিনি তার রসবোধ এবং সম্মোহনী শক্তি দ্বারা পরিস্থিতির মুহূর্তগুলোকে জাকজমকপূর্ণ করে তুলতেন।’
৪০ বছর আগে রানি এলিজাবেথের সঙ্গে প্রথম দেখা করেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এলিজাবেথ ‘একজন রাজার চেয়ে বেশি কিছু ছিলেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি একটি যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০২১ সালে যুক্তরাজ্য সফরের কথা উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘তিনি তার বুদ্ধি দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছেন, তার উদারতা দিয়ে আমাদের আন্দোলিত করেছেন এবং উদারভাবে তার জ্ঞান আমাদের সঙ্গে ভাগ করেছেন।’
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের তার শাসনকালে মোট ১৩ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আরেক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, রানির উদার বন্ধুত্ব, দুর্দান্ত প্রজ্ঞা এবং হাস্যরসের বিস্ময়কর অনুভূতি কখনই ভুলবেন না’ তিনি। ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এই মন্তব্য করেন তিনি।
রানির সঙ্গে চা খাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, এ সময় তিনি তার মেধা, সম্মোহনী শক্তি ও বুদ্ধির প্রমাণ পেয়েছিলেন।
কানাডার রাষ্ট্রীয় প্রধান ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার শাসনকালে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী দেশটির ক্ষমতায় বসেছিলেন। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, রানির প্রতি ‘কানাডিয়ানদের সুস্পষ্ট গভীর এবং স্থায়ী ভালবাসা’ রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেন, রানির সহানুভূতি এবং প্রতিটি প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা এবং ঐতিহ্যকে ধরে রাখা প্রমাণ করে নেতৃত্বের সত্যিকার উদাহারণ তিনি।
রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে এক বিবৃতিতে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পরে জার্মান-ব্রিটিশ পুনর্মিলনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি অবিস্মরণীয় থাকবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুইবার যুক্তরাজ্য সফর করেছেন। এ সময় রানি এলিজাবেথের সঙ্গে হওয়া বৈঠকের কথা স্মরণ করেন তিনি। এক টুইটে মোদি বলে, আমি কখনই তার আন্তরিকতা এবং অনুগ্রহ ভুলব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক সভায় চলাকালে তার (রানি এলিজাবেথ) বিয়েতে উপহার হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর দেওয়া রুমালটি দেখিয়ে আমাকে বলেন— আমি সবসময় এটি যত্ন করে আগলে রাখব।’
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তাদের সমবেদনা পাঠিয়েছেন। তার ‘নেতৃত্বের রোল মডেল ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে’ বলে উল্লেখ করেন সৌদি বাদশা।
রানির মৃত্যুর পর ‘ব্রিটিশ সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘তার মৃত্যু ব্রিটিশ জনগণের জন্য একটি বড় ক্ষতি।’
রানি এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্বের অস্থির সময়ে ব্রিটেনকে নেতৃত্ব দেওয়া রানির মৃত্যু শুধুমাত্র ব্রিটিশ জনগণের জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি বড় ক্ষতি।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিউপনিবেশকরণ এবং কমনওয়েলথের বিবর্তনসহ বহু দশক ধরে ব্যাপক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রানি এলিজাবেথের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।
রানি এলিজাবেথের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রানির মৃত্যুর পর চার্লস তৃতীয়কে ‘গভীর সমবেদনা’ পাঠিয়েছেন তিনি। এক বিবৃতিতে পুতিন বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো রানির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। অনেক দশক ধরে, দ্বিতীয় এলিজাবেথ যথাযথভাবে তার প্রজাদের ভালবাসা ও সম্মান পেয়েছেন। একইসঙ্গে বিশ্ব মঞ্চে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
ব্রিটিনের রানির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি এক শোকবার্তায় রানির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা।
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন শাসক রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকালে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। ব্রিটিশ রাজপ্রসাদ বাকিংহাম প্যালেসের এক বিবৃতিতে রানির মৃত্যুর খবর জানায়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রানির স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। এর পর থেকে বালমোরাল প্যালেসে রানিকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখেন চিকিৎসকরা। তার অসুস্থতার খবরে এদিন সেখানে ছুটে যান প্রিন্স চার্লসসহ তার সন্তান-সন্ততিরা। জানা গেছে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বেশ কিছু দিন ধরে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। তার হাঁটাচলা করতে ও দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছিল।
রানি এলিজাবেথের জন্ম ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল। তিনি ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৫ বছর বয়সে সিংহাসন আরোহণ করেন। সম্প্রতি তার সিংহাসনে আরোহণের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করা হয়। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকা রানি হিসেবে ২০১৫ সালে রানি ভিক্টোরিয়াকে ছাড়িয়ে যান। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্য এবং আরও ১৫টি কমনওয়েলথ রাজ্যের রানি ছিলেন।
সারাবাংলা/এনএস