Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আকবর আলি খান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:২৪

ঢাকা: মিরপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানকে।

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এর আগে বাদ জুমা গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদার আনুষ্ঠানিকতা শেষে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের জন্য তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে গুলশানের বাসার নিচে আকবর আলি খানের মরদেহ রাখা হয়। সেখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষী ও বিশিষ্টজনরা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, ড. আকবর আলি খানের মৃত্যুতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ড. আকবর আলি খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আকবর আলি খান।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশসাক বা এসডিও ছিলেন। যুদ্ধকালীন সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সরকার দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তার বিচার করে। তিনি ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আকবর আলি খান সরকারি চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হন।

২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন। পরবর্তীতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন না হবার আশঙ্কায় তিনি তিনজন উপদেষ্টার সঙ্গে পদত্যাগ করেন।

বিজ্ঞাপন

আকবর আলি খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ১৯৬৪ সালে সম্মান ও ১৯৬৫ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন দুটিতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে।

সরকারি চাকরিতে যোগদানের পূর্বে আকবর আলি খান কিছু সময়ের জন্য শিক্ষকতা করেন।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে তিনি লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭০ সালে হবিগঞ্জ মহুকুমার এস. ডি. ও. হিসেবে পদস্থ হন। তিনি তার এলাকায় সুষ্ঠুভাবে ১৯৭০-এর নির্বাচন পরিচালনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগের অসহযোগ আন্দোলনে আকবর আলি খান সমর্থন দেন। পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে হবিগঞ্জ পুলিশের অস্ত্র সাধারণ তিনি মানুষের মধ্যে বিতরণ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অণুপ্রাণিত করেন।

আকবর আলি খান স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌছে দেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য যোগান দেওয়ার জন্য গুদামঘর খুলে দেন এবং পরবর্তী সময়ে আগরতলায় চলে যান।

১৯৭১-এর ডিসেম্বরে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সচিবালয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন।

১৯৭৩ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। আকবর আলি খান তার পদত্যাগপত্র জমা দিলেও শেখ মুজিবর রহমান তা গ্রহণে অস্বীকৃত জানান। তাকে অবসর না দিয়ে শিক্ষকতা করার জন্য ছুটি দেওয়া হয়।

কমনওয়েলথ বৃত্তির জন্য মনোনীত হওয়ার আগে তিনি অল্প সময়ের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বৃত্তির জন্য তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়এ যোগ দেন এবং সেখানে অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্স এবং পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৯ সালে দেশে ফেরত আসার পরে অল্প সময়ের মধ্যেই আকবর আলি খান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাকে আবারও প্রশাসনের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

১৯৮৪ সালে তিনি সাভারের বিপিএটিসি-তে মেম্বার ডাইরেক্টিং স্টাফ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালের আগ পর্যন্ত তিনি পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং কর্মকমিশন সচিবালয়ে কাজ করেন।

ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসে অর্থমন্ত্রী পদে যোগ দেন আকবর আলি খান। ঢাকায় ফিরে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে যোগ দেন। ১৯৯৩ এ সরকারের সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আকবর আলি খান। ১৯৯৬ সালে তিনি অর্থ সচিব হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বদলি হন।

২০০১ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে বিকল্প এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর পদে যোগদান করেন। বিশ্ব ব্যাংকে তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।

বিশ্ব ব্যাংক থেকে অবসর গ্রহণের তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর গভর্নমেন্ট স্টাডিজ প্রতিষ্ঠিত করেন।

আকবর আলি খান দেশের ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও অগ্রগতি নিয়ে গবেষণা করছেন। একই সঙ্গে তিনি জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিয়ে গবেষণা করছেন। আলি আকবর খানের গ্রন্থ ‘হিস্টোরি অব বাংলাদেশ” বা বাংলাদেশের ইতিহাস’ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত।

‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ আকবর আলি খানের গবেষণাধর্মী একটি আলোচিত বই।

সারাবাংলা/একে

আকবর আলি খান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর