‘প্রেমের কারণে’ বাড়ছে আত্মহত্যা, বেশিরভাগই স্কুল শিক্ষার্থী
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:৫৫
ঢাকা: দেশে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে ৩৬৪ জন। এর মাঝে ৫৩.৩০ শতাংশ অর্থাৎ ১৯৪ জনই ছিলেন স্কুলগামী শিক্ষার্থী। গত আট মাসে কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে ৭৬ জন ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জনের আত্মহননের তথ্য পাওয়া গেছে। এই সময়ে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীও ছিলেন ৪৪ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছরের ৮ মাসের তথ্য বলছে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। প্রেমঘটিত কারণেই স্কুল শিক্ষার্থীদের ২৫.২৭ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননের এই সংখ্যা উদ্বেগজনক।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন। ‘বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার; আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া কতটা জরুরি?’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। দেশের দেড়শ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ করে এই সমীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন।
আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি স্কুলগামীদের মাঝে
আত্মহত্যায় স্কুলগামীরা এগিয়ে। বিদ্যালয়গামী অর্থাৎ প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যা করেন ৫৩.৩০ শতাংশ। আত্মহত্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যা ২০.৮৮ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩.৭৪ শতাংশ।
আত্মহননকারীদের মধ্যে মাদরাসায় শতকরা ১২.০৯ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে সমীক্ষার ফলাফলে।
বয়সভিত্তিক আত্মহত্যার হার
সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি শতকরা হারে যা ৭৮.৬ শতাংশ। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেন ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা, যার সংখ্যা ১৬০ জন।
এই আট মাসে ২১ থেকে ২৬ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৩.৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেন।
১৩ বছরের নিচে যাদের বয়স, তারাও আছে আত্মহননের এই তালিকায়। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭.৯৭ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ জন আত্মহত্যা করেন। সর্বনিম্ন ৭ বছরের একটি শিশুও আত্মহত্যা করেছে বলে জানানো হয় সমীক্ষা ফলাফলে।
নারী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার হার বেশি
সমীক্ষায় দেখা যায়, আত্মহত্যায় এবারেও এগিয়ে আছে নারী শিক্ষার্থীরা যা মোট আত্মহননকারীদের ৬০.৭১ শতাংশ বা ২২১ জন। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৯.২৯ শতাংশ বা ১৪৩ জন।
বিগত আট মাসে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি ৬৭.০১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। এছাড়াও ৩২.৯৯ শতাংশ পুরুষ নানা কারণে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।
কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে ৫৩.৯৫ শতাংশ নারী আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়াও ৪৬.০৫ শতাংশ পুরুষ আত্মহত্যা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুষদের আত্মহননের হার ৬০ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ।
এমনকি মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে যা সংখ্যায় ৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৬০.৭১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী এবং ৩৯.২৯ শতাংশ পুরুষ।
বিভাগ অনুযায়ী আত্মহত্যা
আত্মহত্যাকারীদের অবস্থান বিবেচনায় সবার শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। শতকরা ২৫.২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬.৪৮ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ১৪.০১ শতাংশ আত্মহত্যা করে।
দেশের রংপুর বিভাগে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৮.৭৮ শতাংশ ও বরিশাল বিভাগে ৯.৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন গত আট মাসে। ময়মনসিংহ বিভাগে ৭.৪২ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৪.০১ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
অপরদিকে, সিলেট বিভাগে তুলনামূলক ভাবে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন যা ৪ শতাংশ।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ জেলার এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি ডিভিশন) আজিজুল হক মামুন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।
সারাবাংলা/এসবি/এমও
আঁচল ফাউন্ডেশন আত্মহত্যা প্রেমের কারণ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস স্কুল শিক্ষার্থী