সংযোগ খালে অবৈধ বাঁধ, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় এলাকাবাসী
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:২৪
ঢাকা: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামে ‘দোগনা’ ও ‘ভূতার’ খালে বাঁধের কারণে সেখানকার শতশত একর কৃষি জমি অনাবাদি এবং মাছের চারণ ক্ষেত্র ধ্বংসের মুখে।
জানা গেছে, বিশখালী-বলেশ্বর দুই নদীর সংযোগ ‘দোগনা’ ও ‘ভূতার’ খালে সংঘবদ্ধ ভূমি দস্যুদের বাঁধের কারণে খাল দু’টিকে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক মানুষের নীরব আর্তনাদ যেন বিষবাষ্পে পরিণত হয়েছে।
মঠবাড়িয়ার পূর্বে বিশখালী ও পশ্চিমে বলেশ্বর নদী। দুই নদীর সংযোগ খালটি বিশখালী নদী থেকে ওঠে ঝালকাঠীদ’র কাঠালিয়া ও বরগুনা’র বামনা উপজেলার মধ্যস্থান আমুয়া লঞ্চঘাট থেকে দুইপাশে ৪টি উপজেলা রেখে সোজা প্রায় ২৫ কি.মি পশ্চিমে তুষখালী লঞ্চঘাট হয়ে বলেশ্বর নদীতে মিলেছে। এই ২৫ কি.মি খালের দুই পাশে ৪টি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রাম পাশাপাশি অবস্থিত।
যা খাল দু’টিকে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক মানুষের দৈনন্দিন জীবন জীবিকা, অর্থনৈতিক নির্ভরতা, মৎস্য শিকার, নৌ- যাতায়াতসহ বহুমুখী সুবিধা ২০০ বছর থেকে ভোগ করে আসছে। কিন্তু এই সংযোগ খালটির মধ্যবর্তী স্থান মিরুখালী ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের ‘দোগনা’ খাল ও দোগনা খাল এর শাখা ‘ভূতার’ খালে সংঘবদ্ধ ভূমি দস্যুরা সুবিধামতো প্রায় এক কি.মি জুড়ে একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে খালটি খানিকটা ভরাট করেছে, কেউ মাছের চাষ করছে, কেউ দখল করেছে আবার কেউ খালের পার্শ্ব ভরাট করে প্রশস্ততা কমিয়েছে।
প্রায় ৮০ ফুট প্রস্থের খাল দু’টি জনস্বার্থে ব্যবহার্য ১নং খাস খতিয়ানভূুক্ত। ক্রস বাঁধ নির্মাণ ও ভরাট করায় মিরুখালী-ধানীসাফা ইউনিয়ন ও প্রভাবিত এলাকাগুলোর প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশখালী-বলেশ্বর নদীর সংযোগ খালটির স্বাভাবিক জলস্রোতসহ ছোট ও মাঝারী আকারের নৌ-যান চলাচল বন্ধ করা রয়েছে। অবৈধ এ বাঁধের কারণে কৃষিনির্ভর এলাকার কৃষকরা কর্মহীন রয়েছে, শত শত একর ফসলী জমি অনাবাদী পড়ে আছে, জলাবদ্ধতায় ফসলহানি হচ্ছে, তিন ফসলি জমি এক ফসলে পরিণত হয়েছে, বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ভুগছে মানুষ অন্যদিকে শুকনো মৌসুমে তীব্র পানি সংকটে নানা রকম কৃষি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
দেশীয় মৎস ও ফলের উৎপাদন প্রচন্ডভাবে হ্রাস পেয়েছে। পেশাদার ও অপেশাদার শত-শত মৎসজীবী বেকার দিন কাটাচ্ছে।
অথচ কোনো একসময় দুই নদীর জোয়ারের পানি ‘দোগনা’ ও ‘ভূতা’ খালসহ এর আশপাশের শাখা খাল গুলোতে পানির সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেনু পোনা প্রবেশ করে নানা রকম জলশয়, পুকুর, খাল, ধানের ক্ষেতে প্রচুর মাছ বৃদ্ধি পেত। এক সময় এই এলাকা থেকে শত-শত মণ শুটকি ও গলদা চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির মাছ দেশ ও দেশের বাইরে রফতানি হতো। কিন্তু সংযোগ খালে বাঁধের কারণে সবকিছু থেমে গিয়ে দুর্ভোগের পাল্লা ভারী হয়েছে।
এলাকার একাধিক মৎসজীবী জানিয়েছে, বাঁধগুলো খুলে দিলে বিশখালী ও বলেশ্বর নদীর জোয়ারের পানির সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেনু পোনা খাল, ডোবা, পুকুরসহ অন্যান্য জলাশয়ে ঢুকে এলাকাটি পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসবে ও প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছে এলাকাটি ভরে যাবে।
মিরুখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস সোবহান শরীফ জানান, অবৈধ বাঁধের কারণে লক্ষাধিক মানুষ একযুগের বেশি সময় ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়েছে। বাঁধ কেটে খাল দু’টি মুক্ত করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মাওলা মো. মেহেদী হাসান বলেন, সংযোগ খালে বাঁধের বিষয়ে জেলা প্রশাসক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তারা বাঁধ অপসারণ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে