‘দমনপীড়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না’
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৪৩
ঢাকা: দমনপীড়ন করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘ইতি প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘রাজনীতি: পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারকে বলছি, এই যে হাজার হাজার লোককে আহত করেছেন, গুলি করেছেন, মামলা করেছেন- এসব করে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামী মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ সবসময় তাদের অধিকার আদায় করে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছে।’
‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর থেকে কী এনেছেন?’— প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খুব নাচতে নাচতে চলে গেলেন ভারতবর্ষে। একটা মাত্র আশায় যে, ভারতে গিয়ে আবার কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় তার জন্য একটা ব্যবস্থা তারা করে আসবেন।’
‘কী এনেছেন? কিছুই না। আমরা পরিস্কার করে বলছি, কী এনেছেন? ১৫৩ কিউসেক পানির কথা বলেছেন। এছাড়া তো কিছুই দেখছি না। যেদিন সমঝোতা স্মারক সই হয় সেইদিনই আমাদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আমাদের বাংলাদেশি একজন ১৪ বছরের বালককে, আরও দুইজন নিখোঁজ আছে। এটি অহরহ ঘটছে। সেটি (সীমান্ত হত্যা) কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক হোক— এটি আমরা সবাই চাই। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ। আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) তো বলতে থাকেন যে, এমন পর্যায় আপনাদের সম্পর্ক গেছে, সেই সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। এই বিষয়গুলো বলে মানুষকে পুরোপুরিভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন জয়পুর এয়ারপোর্টে নৃত্যগীতে ভরপুর। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সেখানে অংশ নিয়েছেন। আমার দেশের মানুষ যখন গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে গেছে তখন আপনি গুলি করে মারছেন, যখন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গেছে তখন আপনি গুলি করে মারছেন, যখন চাল-ডাল-তেলের দাম বৃদ্ধির পাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেছে তখন গুলি করে মারছেন, যখন এদেশে চরম একটা অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেই সময় জয়পুরে গিয়ে আপনি নৃত্য গীতের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন, তা কখনোই এদেশের মানুষ মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না।’
হাওরে উড়াল সেতুর প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল দেখলাম হাওরের ওপর দিয়ে উড়াল সেতু নির্মাণ করবে। সেখানে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়েছে। দেখবেন সেটা পৌঁছাবে গিয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকায়। এটির প্রয়োজন আছে কিনা, কতগুলো গাড়ি চলবে, ওখানে কী প্রয়োজন আছে তার সম্পর্কে কোনো কথা নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সমস্ত মেগা প্রজেক্ট, অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্ট নিয়ে মূল জায়গা থেকে সরে ভিন্ন জায়গা চলে এসেছে। এখনো তারা বলে যে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া হবে। এদেশে এখনো ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে, দুই বেলা দুই মুঠো খেতে পারে না, যেদেশের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা সঠিকভাবে পায় না, যাদের ছেলে-মেয়েরা এখনো বিএ-এমএ পাস করে কোনো কর্মসংস্থান নেই। তারা মোটর বাইক চালাচ্ছে, রিকশাভ্যান চালাচ্ছে, শ্রমিক ভ্যান চালাচ্ছে- সেখানে আপনি (সরকার) বলছেন, উন্নয়নের রোল মোডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জাতিকে এই রাষ্ট্রকে তারা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে গেছে। আজকে কোথাও বিচার নেই, আইনশৃঙ্খলা ধ্বংস হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটা দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কল্পনা করা যায় যে, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে যারা সেখানে কথার আগেই গুলি করে মারে, গুলি করে হত্যা করে। পাকুন্দিয়ায় যে ছেলেটাকে কাছে থেকে গুলি করেছে তার ফুসফুস ফুটো হয়ে গেছে, তার লিভার ফুটো হয়েছে, তার কিডনি ফুটো হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে এবং ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, গ্রন্থের লেখক হারুন-অর-রশিদ ও প্রকাশক মো. জহির দীপ্তি।
সারাবাংলা/এজেড/একে