সরকারের জনসমর্থন না থাকায় যেনতেন নির্বাচন করতে মাতামাতি করছে ইসি
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৫১
ঢাকা: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের এমপি বলেছেন, ‘সরকারের জনসমর্থন না থাকায় যেনতেন নির্বাচন করতে মাতামাতি করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা নির্বাচনে পরাজিত হলে সার্বিকভাবে পরাজিত হবে, অস্তিত্ব সংকটে পড়বে তারা।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আগে থেকেই দায় এড়াতে বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে। কখনো বলছে রাজনৈতিক দলগুলো সহায়তা না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। আবার কখনো বলছে, কাউকে নির্বাচনে নেওয়া নির্বাচন কমিশনের কাজ না। তাদের বুঝতে হবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা নেই বলেই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে যেতে চাচ্ছে না।’
‘নির্বাচন কমিশনের উচিত সবার আস্থা অর্জনে চেষ্টা করা। শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের কিছু মিত্র ছাড়া কেউই নির্বাচনে ইভিএম চায়নি, কিন্তু নির্বাচন কমিশন হঠাৎ করেই ইভিএমে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশের মানুষ নির্বাচনে ইভিএম চায় না। আর এসব কারণেই দেশের মানুষ নির্বাচনের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে দলীয় লোক নিয়োগ করা হয়েছে। আবার ভোটের সময় পোলিং বুথে আওয়ামী লীগের কর্মী নিয়োগ দেওয়া থাকে, তারা সহায়তার নামে ইভিএমে ভোটারদের ভোট দিয়ে দেন। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।’
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টি নেতা এএনএম রফিকুল আলম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টি পলাশ উপজেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। প্রজাতন্ত্র হচ্ছে, সাধারণ মানুষই হচ্ছেন দেশের মালিক, তারা ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। আবার প্রতিনিধি অপছন্দ হলে আবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারবেন। কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের মালিকানা ছিনতাই হয়ে গেছে। দেশের মানুষ এখন আর প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। পছন্দ না হলে প্রতিনিধি পরিবর্তনও করতে পারে না সাধারণ মানুষ। এখন আর প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ নেই শুধু বাংলাদেশ আছে। প্রজাতন্ত্র আছে শুধু অলংকার হয়ে।’
‘দেশে চলছে শাসক ও প্রশাসক দিয়ে। প্রশাসকদের জবাবদিহিতা থাকে শুধু শাসকদের কাছে। প্রশাসক নিয়োগ করা হয় শোষণের জন্য। জনগণের কাছে কারো জবাবদিহিতা থাকে না। দেশের কোথাও জবাবদিহিতা নেই, তাই দুর্নীতিতে দেশ ভেসে যাচ্ছে। যখন মেগা প্রকল্প শুরু হয়েছে, তখন শুধু এক বছরেই সুইস ব্যাংকেই জমা পড়েছে ৪ লাখ কোটি টাকা। প্রতিটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে পাশাপাশি ব্যয়ও বাড়ছে। অন্যান্য ব্যাংকে কত টাকা পাচার হয়েছে তা কেউ জানে না। দেশের মানুষ জানতে চায় পানামা পেপারস্ ও প্যারাডাইস পেপারসসে দুর্নীতির যে তথ্য ফাঁস হলো, তা তদন্ত হলো না কেন?’
তিনি বলেন, ‘একটি সরকার বারবার ক্ষমতাসীন হওয়ার মানে দেশের স্থিতিশীলতা নয়। দেশের স্থিতিশীলতা থাকলে ক্ষমতায় কে এল আর কে গেল তাতে কোনো সমস্যা হয় না। দেশে আসলে স্থিতিশীলতা নেই, কেউ ক্ষমতা ছাড়লে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। কারণ এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সবাই শত্রু মনে করে। এমনটি হওয়া উচিত নয়। আমরা চাই সহনশীল পরিবেশে সবাই যার যার রাজনীতি করবেন, কেউ কাউকে শত্রু ভাববেন না। আমরা কোনো ব্যক্তি নয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এবং আমলাদের সহায়তায় ব্যবসার নামে দেশে লুটপাট চলছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এলএনজি আমদানি করতে পারছে না সরকার। কিন্তু আরও ২টি এলএনজি স্টেশন স্থাপন করতে চাচ্ছে। এলএনজি আমদানি করতে না পারলে সেগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে কোটি কোটি টাকা দেওয়ার পায়তারা চলছে। বিনা টেন্ডারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অসংখ্য পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু উৎপাদন নেই। সেগুলোকে প্রতি মাসে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের নামে লুটপাট চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তাহলে এখন লোডশেডিং কেন? কেন এখন বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে?’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের যে তথ্য আমরা পেয়েছি তাতে বিশেষ কিছু নেই। এই সফরের ফলাফল যেটুকু প্রকাশ হয়েছে তা গতানুগতিক।’
এএনএম রফিকুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল হামিদ ভাসানী, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনি সম্পাদক মো. হুমায়ুন খান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আজগর, দপ্তর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সমরেশ মন্ডল মানিক, যুগ্ম শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মীর সামসুল আলম লিপটন, কেন্দ্রীয় নেতা শেখ সরোয়ার হোসেন, ফজলে এলাহী সোহাগ, কাজী মামুন, আবু সাদেক বাদল, আরিফুর রহমান রুবেল, এম মহিবুর রহমান, শাহিনারা সুলতানা রীমা, এস এম হাসেম।
পলাশ উপজেলার নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাকির হোসেন মৃধা, ডা. মো. আব্দুস শুক্কুর, বাবু উৎপল দে, ডা. মো. সাখাওয়াত হোসেন, হুমায়ুন কবির মুকুল, মো. কামাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, মো. তোফাজ্জল হোসেন, মো. আবেদ আলী, আল আমিন সরকার, ওসমান গণি শাহ, রেজওয়ান, মিরাজুল ইসলাম, শামীম আজাদ।
সারাবাংলা/একে