Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওষুধ বিক্রেতা থেকে সরাসরি চিকিৎসক, খুলে বসেছেন ‘আরোগ্য নিকেতন’

মির্জা মাহামুদ হোসেন রন্টু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৩০

চেম্বারে বসে আছেন মহাদেব দাস, ছবি: সারাবাংলা

নড়াইল: জেলার সদর হাসপাতালের সামনে ‘আরোগ্য নিকেতন’ প্রতিষ্ঠান খুলে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে মহাদেব দাসের বিরুদ্ধে। একসময় ওষুধের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পরে ডিএমএফ কোর্স করে হয়ে যান বিশাল অভিজ্ঞ ডাক্তার।

সরেজমিনে নড়াইল সদর হাসপাতালের সামনে খান ফার্মেসির পেছনে গিয়ে দেখা যায়, অন্য আট-দশজন চিকিৎসকের মতো সাজানো-গোছানো বিশাল চেম্বার নিয়ে বসে আছেন মহাদেব। শুধু সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় প্রেসক্রিপশনে নামের পাশে ডাক্তার শব্দটি লিখতে পারেননি। চেম্বারে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দীর্ঘ লাইন। আর এখানে বসেই সব ধরনের রোগী দেখেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কথা হয় বকুল মুন্সী নামে নার্ভের সমস্যা নিয়ে আসা এক রোগীর সঙ্গে, হাতে বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার সাহেব টেস্ট দিয়েছিলেন। সেগুলো করে এনে ডাক্তার সাহেবকে দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন নিয়েছি। এতে সাত রকম ওষুধ লিখেছেন তিনি। এর আগেও মহাদেবের কাছে এসেছি। শুধু টেস্ট আর ওষুধের সংখ্যা বাড়ে কাজের কাজ কিছুই হয় না।’

মাইজপাড়া থেকে ‘আরোগ্য নিকেতন’ এসেছেন ষাটোর্ধ্ব বিকাশ দাস। প্রতিবেদকের সামনেই কথিত চিকিৎক মহাদেবকে বলতে লাগলেন, ‘আপনি যে ওষুধ দিয়েছেন তাতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো আপনার দেওয়া ওষুধ খেয়ে আমার প্রস্রাবে সমস্যা হচ্ছে, পা ফুলে গেছে।’ জবাবে মহাদেব বলেন, ‘আপনার কিডনিতে টিউমার হয়েছে, আপনি এই ওষুধগুলো নিয়মিত খান ঠিক হয়ে যাবে।’

বাসগ্রাম থেকে স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা নিয়ে এসেছেন তরিকুল ইসলাম। আসার পর তাকে পরীক্ষার জন্য ল্যাবসান ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন ডাক্তার মহাদেবকে দেখাতে। আকলিমা এসেছেন নাতিকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার মহাদেবের তত্ত্বাবধানে একজনকে দিয়ে চার বছরের নাতিকে খতনা করিয়েছিলেন। ১৫ দিন পার হলেও ক্ষতস্থান শুকায়নি। অবস্থা খারাপ, রাতে ঘুমাতে দেয় না নাতি। তাই ডাক্তারকে দেখাতে এসছেন।’

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও গ্রাম অঞ্চল থেকে আরও ১০/১২ জন রোগী এসে বসে আছেন তাকে দেখানোর জন্য। নড়াইল সদর হাসপাতালের সামনে থেকে মহাদেবের চেম্বারে এসব রোগী ধরে আনার দায়িত্বে রয়েছেন চিহ্নিত কিছু দালাল। এ সব দালালেরা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কথা বলে গ্রাম থেকে আসা সাধারণ রোগীদের নিয়ে আসেন মহাদেবের কাছে। রোগী প্রতি কথিত এই ডাক্তারের ফি ২০০ টাকা। এছাড়া রোগীর সমস্যার কথা শুনে টেস্ট স্লিপ হাতে ধরিয়ে দিয়ে দালালের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন ল্যাবসান ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে। সেখান থেকেও দালাল ও মহাদেব টেস্ট প্রতি মোটা অংকের কমিশন পান বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ডিএমএফ কোর্স করে কিভাবে নার্ভ, কিডনি, মেরুদণ্ড ও শিশুরোগীদের চিকিৎসা এবং টেস্ট করার জন্য প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন?- এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। আর জরুরি রোগীদের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে রেফার্ড করি।’

একজন ডিএমএফ হয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালের সামনে বসে এভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার নামে জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেখার এখতিয়ার আপনার আছে কিনা?- এর জবাবে মহাদেব বলেন, এমবিবিএস, বিডিএস ডিগ্রি না থাকলে নামের পাশে ডাক্তার লেখা যায় না। কিন্তু রোগী দেখায় তো কোনো বাধা নেই।’ আর এ বিষয়ে সরকারি কোনো বিধিনিষেধ আছে কি না— তাও জানেন না তিনি।

এ বিষয়ে নড়াইলের সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার জানান, সদর হাসপাতালের সামনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার নামে এমন কর্মকাণ্ড যদি কেউ করে থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

সারাবাংলা/এনএস

আরোগ্য নিকেতন নড়াইল মহাদেব দাস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর