সংকটের মধ্যেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘শোভাবর্ধন প্রকল্প’
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:২১
ঢাকা: চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই ‘ভাঙচুর ও শোভাবর্ধনের জন্য প্রকল্প’ নিচ্ছে খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যেই ‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ক্যাম্পাসের ভবনসমূহের স্থাপনাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মপরিবেশ উন্নতকরণ’ শীর্ষক এক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য আগামী মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে অনেক ভবন সংস্কার হয় না। সেসব কারণে কর্মকর্তাদের অফিস করতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। সেই সঙ্গে বর্তমানে বিভিন্ন সংস্কার কাজ চলছে। সব কিছুই করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। এরকম প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে বলে নেওয়া হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নতুন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কমপ্লেক্স সুবিধা বাড়বে। বিদ্যমান ভবন ও সুবিধার মানোন্নয়নের মাধ্যমে উপযোগিতা বৃদ্ধি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আসা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত হাইকমিশনারকে আধুনিক সুবিধা দেওয়া হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন দেশের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংস্থা। দেশের স্বল্পমেয়াদী, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং কৌশল প্রণয়ণের মাধ্যমে কমিশন দেশের মেয়াদে নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশ পরিকল্পনা সেক্টর প্ল্যানিং, পলিসি প্ল্যানিং, প্রোগ্রাম প্ল্যানিং, প্রজেক্ট প্ল্যানিং এবং মূল্যায়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরিকল্পনা কমিশনের মোট আয়তন ১৩.০৬ একর। এই চত্বরের মধ্যে ৪টি সরকারি অফিস, একটি ব্যাংক, একটি পুলিশ ব্যারাক অবস্থিত।
এলাকাটি আয়তনের দিক থেকে সম্প্রসারণের সুযোগ নেই। অন্যদিকে, চত্বরের ভবনগুলো নির্মাণের পর থেকে কখনও সম্প্রসারণ করা হয়নি। অধিকাংশ ভবনের অফিস কক্ষগুলো ব্যবহার করা কষ্টসাধ্য। এ কারণে কক্ষের উন্নয়ন, সংস্কার ও আধুনিকায়ন, শেড নির্মাণ এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে পরিকল্পনা কমিশনের আয়তন ও কার্যপরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর কর্ম পরিবেশ আধুনিক ও উন্নত হবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৩৫২.৫৯ বর্গমিটার জরুরী বহির্গমন সিড়ি নির্মাণ, ৩৪৩.২ বর্গমিটার বিদ্যমান সিঁড়ি অপসারণ করে করিডোরের সংস্কার কাজ এবং ৪৭৩ বর্গমিটার মসজিদের উন্নয়ন ও শোভাবর্ধন।
এছাড়া ইলেকট্রিক সাব স্টেশনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও ডে-কেয়ার সেন্টারের আধুনিকায়ন, প্রবেশ প্রান্তে ১৫০ মিটার সাধারণ টয়লেট নির্মাণ ও গাড়ি রাখার শেড, ১৪ হাজার ৩৫৬.৮৫ বর্গমিটার করিডোর আধুনিকায়ন, সংস্কার, সিরামিক ওয়াল মেরামত, পয়েন্টিং এবং পানিরোধক কাজ, এক জব ফায়ার ডিটেকশন ও এলার্মিং সিস্টেম স্থাপন এবং শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সরবরাহ ও স্থাপন করা হবে। সেইসঙ্গে পাওয়ার লাইন করা, ১১২টি ব্লকের প্রতিটি ফ্লোরে সিসি টিভি স্থাপন এবং শহিদ মিনার, মসজিদ বৈদ্যুতিককরণ, এলইডি লাইট স্থাপন, ওয়্যারিং, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ও ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এবং ৫০ কোটি টাকার নিচে ব্যয় হওয়ায় এটি অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেই। এখন অবগতির জন্য প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে পরিকল্পনা বিভাগ (গণপূর্ত অধিদফতর অর্পিত ক্রয়কার্যের মাধ্যমে)।
সারাবাংলা/জেজে/এমও