পায়রা-রামপালের বিদ্যুৎ ঢাকায় আনতে চলছে সঞ্চালন লাইনের কাজ
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:২১
ঢাকা: দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। যা গত ২১ মার্চ সশরীরে উপস্থিত হয়ে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দেশে সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে শতভাগ দূষণমুক্ত কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়।
১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দু’টি ইউনিটই বছর দুয়েক আগে থেকেই উৎপাদন শুরু করেছে। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করা সম্ভব হয়নি। এবার সে লাইনের কাজ দ্রুতই শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
ইতোমধ্যে রাজধানীর আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, ‘লাইনের কাজ শেষ হলেই পায়রা, রামপাল আর রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সহজেই জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসা যাবে।’
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নিশানবাড়িয়ায় ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি হয়। এরপর বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড গঠিত হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রেটিতে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুটি ইউনিটের একটি উৎপাদন শুরু করে ২০২০ সালে, আর দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদন শুরু করে ২০২১ সালে। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি-সজ্জিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ন্যূনতম জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। গত দুই বছর ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে পায়রা। কিন্তু সঞ্চালন লাইন না থাকায় সেই বিদ্যুৎ ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোর একটি রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারি- কাটাখালী ও কৈর্গদাশকাঠী এলাকায় ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপরে কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। মহামারি করোনা ও কয়লার সংস্থান না হওয়ায় যথা সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা না গেলেও বর্তমানে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনও করবেন হয়তো। কিন্তু এখানেও সমস্যা দেখা দেবে। সঞ্চালন লাইন তৈরি না হলে রামপালের বিদ্যুৎও ঢাকায় আনা সম্ভব হবে না।
২০২৫ সালে উৎপাদনে যাবে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই সমস্যা দেখা দিতে পারে ২৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুরের ক্ষেত্রেও। দক্ষিণাঞ্চলের পায়রা, রামপাল এবং রূপপুর মিলিয়ে মোট পাঁচ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এসব কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ঢাকায় বিদ্যুৎ নিয়ে আসতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। আর এ লাইন নির্মাণ করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
সংস্থাটির সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিতে মোট ১১টি টাওয়ার বসানো হচ্ছে। সূত্র বলছে, বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। তাই ওই সব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ঢাকায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ ঢাকায় আনতে ২০১৬ সালে আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ১৬৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য লাইনের ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার যাবে পদ্মার ওপর দিয়ে। গাবতলীর আমিনবাজারে বসবে ৪০০ কেভি সাবস্টেশন। যার মাধ্যমে ঢাকায় আসবে বিদ্যুৎ।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মাসেতুর সহযোগিতা নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইন। এই সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পায়রা এবং রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।’ কাজটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাস্তবায়ন প্রকল্প সংস্থা পিজিসিবি সুত্রে জানা গেছে, মোংলা থেকে গোপালগঞ্জ অংশের কাজ শেষ। মাওয়া থেকে আমিনবাজারের কাজও শেষের দিকে। এ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১ হাজার ২৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে। এছাড়া পিজিসিবির নিজস্ব বিনিয়োগ ৩৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং বাকি অর্থের যোগান এসেছে সরকারের তহবিল থেকে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম