আবাসিক এলাকায় শতাধিক অবৈধ কয়েল কারখানা, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৩৮
ভৈরব: ভৈরবে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ মশার কয়েল কারখানা। তাদের কোনোটিরই নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা অনুমোদন। যত্রতত্র এসব কারখানা গড়ে উঠায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এলাকাবাসী। এসব কারখানায় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা। অবৈধ কারখানা মালিকদের কারণে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। তাই এসব অবৈধ মশার কয়েল কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বৈধ কারখানার মালিক ও স্থানীয়রা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।
ভৈরবে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শহরের জগন্নাথপুরের লক্ষীপুর, তাতারঁকান্দি, কমলপুর, পঞ্চবটি, ঘোড়াকান্দা, ভৈরববাজারের আবাসিক এলাকায় বৈধ-অবৈধভাবে শতাধিক মশার কয়েল কারখানা গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে বৈধ রয়েছে ২২টি এবং অবৈধভাবে আরও প্রায় শতাধিক মশার কয়েল কারখানা রয়েছে।
অবৈধ এসব কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই। নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই কারখানায় অগ্নিদগ্ধে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এমনকি কারখানায় কেমিস্টও নেই। অনুমান করে কেমিক্যাল দিয়ে নিম্নমানের এসব কয়েল উৎপাদন করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে।
এছাড়া আবাসিক এলাকায় এসব কয়েল কারখানা গড়ে উঠায় কেমিক্যালের ধোঁয়ায় শিশুসহ সব বয়সের মানুষ শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, চোখ জ্বালাপোড়া করা ও মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, আবাসিক এলাকায় মশার কয়েল কারখানার কয়েল তৈরিতে যে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হয় তাতে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে। তাই আবাসিক এলাকায় কয়েল কারখানা যেন গড়ে না ওঠে।
কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ জানান, নতুন করে আবাসিক এলাকায় করেল কারাখানা নির্মাণে পরিবশে অধিদফতর থেকে কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। অবৈধ এসব কারখানার বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভৈরববাজার ফায়ার স্টেশনের সাব-অফিসার শামসুল হক জানান, ভৈরবে মশার কয়েল কারখানায় অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডে ১ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘ভৈরবে বিএসটিআই ও পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া মশার কয়েল কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযান চলবে এবং দ্রুত এসব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
ভৈরব কয়েল কারখানা মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ মসকিউটো কয়েল ম্যানুফেকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মুরাদ আহমেদ জানান, ভৈরবে ২২টি কয়েল কারখানার বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে। বাকি প্রায় শতাধিক কয়েল কারখানার অনুমোদন নেই। তারা অবৈধভাবে নিম্নমানের কয়েল তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
বিএসটিআইএর উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক জানান, সারা বাংলাদেশে ১২৫টি কয়েল কারখানায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদন রয়েছে। তবে অননুমোদিত কারখানার সংখ্যা কত তা তিনি বলতে পারেননি। অননুমোদিত কয়েল কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এমও