মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ স্মারক হস্তান্তর করল ভারত
২৫ এপ্রিল ২০১৮ ১৭:৫৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সশস্ত্র বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের বেশকিছু স্মারক হস্তান্তর করেছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।
বুধবার (২৫ এপ্রিল) ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সশস্ত্র বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের স্মারকগুলো হস্তান্তর করেন।
হস্তান্তর করা মুক্তিযুদ্ধের স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে, দুইটি পিটি-৭৬ ট্যাংক, একটি এমআই ৪ হেলিকপ্টার। ২৫টি অস্ত্র (পিস্তল, রাইফেল, মেশিন গান, মর্টার, রকেট লঞ্চার)। অনেক সংখ্যক শিল্পকর্ম, ঐতিহাসিক ছবি, সংরক্ষিত অডিও ও ভিডিও ক্লিপিং, মানচিত্র, যুদ্ধের দলিল, পত্রিকার ক্লিপিং, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যচিত্র।
জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা সফরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক উপহার দিয়েছিলেন। সেগুলোই আজ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
স্মারকগুলো হস্তান্তরের সময়ে সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ লে. জে. মো. সহকারী চিফ অফ এয়ার স্টাফ (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল এম. আবুল বাশারসহ সশস্ত্র বাহিনী ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘অধিকাংশ স্মারক বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন পিটি-৭৬ ও এমআই ৪ হেলিকপ্টারের মত বড় আকৃতির স্মারকগুলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এগুলো তাদের নিজ নিজ জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পিটি-৭৬ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আর্মার্ড রেজিমেন্টের হালকা ধরনের উভচর ট্যাংক। যুদ্ধের সময় নদী ও জলাশয় পারাপারে এই ট্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। গরীবপুরের বিখ্যাত যুদ্ধে এই ট্যাংকগুলির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। যে যুদ্ধে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এম৩৪ শ্যাফে ট্যাঙ্কসমৃদ্ধ পাকিস্তানি বাহিনীর একটি বড় দল পরাজিত হয়েছিল। যুদ্ধের সময় উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমাঞ্চলসমূহে পাকিস্তানি বাহিনীকে পিছু হটাতে এই ট্যাংকগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।’
এমআই-৪ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর পরিবহন হেলিকপ্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো উল্লেখ করে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘পূর্বাঞ্চলে যৌথ বাহিনী কর্তৃক আকাশপথে পরিচালিত অপারেশনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল এটি। দ্রুত সিলেট দখল করতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ৪/৫ গুর্খা ব্যাটালিয়নটি এই অপারেশনের জন্য সুরমা নদীর তীরে সিলেটের উপকণ্ঠে অবতরণ করেছিল। আবার ওই হেলিকপ্টারযোগেই ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রমত্তা মেঘনা নদীর চরে অবতরণ করেছিল ৩১১ পদাতিক ব্রিগেড। মেঘনা পাড়ি দিয়ে টানা ৩৬ ঘণ্টায় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ১১০ বার হামলা চালানো হয়েছিল ওই হেলিকপ্টার থেকে। যৌথ বাহিনীর সেই অভিযান ‘মেঘনা হেলিব্রিজ’ নামে পরিচিত।’
ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা জানান, বিভিন্ন জাদুঘর এবং প্রতিষ্ঠানের অনুরোধের ভিত্তিতে করে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হস্তান্তর করা একটি চলমান উদ্যোগ। এরই মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনী একটি হান্টার জেট ফাইটার, একটি ডাকোটা পরিবহন বিমান এবং বর্তমানে এই এমআই ৪ হেলিকপ্টার উপহার দিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ছয়টি ৩.৭ হাভিটজার (ছোট কামানবিশেষ) বন্দুক উপহার দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫টি অস্ত্র ও পিটি ৭৬ ট্যাংক হস্তান্তর করা হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনী আইএনএস বিক্রান্ত, যুদ্ধে অংশ নেয়া জাহাজের মডেল এবং সংরক্ষিত ছবি উপহার দিয়েছে।
সারাবাংলা/জেআইএল/ কেএমএম/এমআইএস