Tuesday 10 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাশের বাসার নারীকে ‘খুন করে’ নির্বিকার, বুঝতে পারেনি স্ত্রীও

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:০৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে বিজিবি সদস্যের স্ত্রী খুন ও লুটপাটের পুরো রহস্য উদঘাটনের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লাশ উদ্ধারের পর প্রতিবেশি যে যুবককে আটক করা হয়েছিল, সে একাই খুন ও লুটপাট করেছে। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে সে তার সঙ্গে আরও দু’জন ছিল বলে জানিয়েছিল। আর্থিক সংকটে থাকা ওই যুবক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারের লোভে তার পাশের বাসার ভাড়াটিয়া ওই নারীকে খুন করে।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর ইপিজেড থানায় সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা। এ সময় ইপিজেড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল করিমও ছিলেন।

রোববার বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার নিউমুরিং তক্তারপুল এলাকায় আজিজ শাহ রোডের মাবিয়া ভিলার পঞ্চম তলায় এক রুমের একটি বাসা থেকে শামীমা আক্তারের (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শামীমা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সুবেদার জামাল উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি রাঙ্গামাটিতে কর্মরত আছেন। নিঃসন্তান শামীমা একাই নগরীর বাসায় থাকতেন।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, বিজিবি সদস্য জামাল উদ্দিন রোববার সকালে স্ত্রীকে ফোন করে না পেয়ে ভবনের মালিককে জানান। মালিক ওই বাসায় গিয়ে শামীমাকে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ও স্বজনদের খবর দেন। কাছেই থাকা কয়েকজন স্বজন ওই বাসায় গিয়ে শামীমাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখেন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনার পর পুলিশ ভবনে বসবাসরত সবাইকে বের হতে নিষেধ করেন। ভবনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে মো. কিবরিয়া জাফর (২৮) নামে এক যুবককে সন্দেহ হওয়ায় তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ওই যুবক পুলিশকে জানায়, তিনজন মিলে শামীমার ঘরে ঢুকে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। আটকের পর যুবকের কাছ থেকে কিছু স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। তার হাতে কামড়ের গভীর ক্ষত দেখতে পায় পুলিশ।

উপপুলিশ কমিশনার শাকিলা সোলতানা জানান, হেফাজতে নিয়ে টানা ১০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর কিবরিয়া জাফর একাই হত্যাকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে স্বীকার করে বিস্তারিত বিবরণ দেন। জাফরের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম কুধুরখীল এলাকায়। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মাবিয়া ভিলায় শামীমার পাশের বাসায়।

‘জাফর আমাদের জানিয়েছিল, তার সঙ্গে থাকা দুই যুবক শামীমাকে খুন করেছে। সে শুধু স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও নগদ টাকা নিয়েছিল। তার কথায় আমরা বিভ্রান্ত হয়ে বাকি দু’জনকে শনাক্ত করতে গিয়ে কিছু সময় নষ্ট হয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে জানায়, শামীমাকে আপা বলে ডাকত জাফর। আর শামীমাও ছোট ভাইয়ের মত দেখত তাকে। শনিবার রাতে জাফর দরজার নাড়া দিলে পরিচিত দেখে ভেতর থেকে শামীমা খুলে দেয়। এ সময় সে ঘরে ঢুকেই শামীমার মুখ চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সে শামীমাকে জখম করে মুখ ও হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিজের বাসায় ঢুকে পড়ে।’

শামীমার ছোট বোনের বরাত দিয়ে ওসি আব্দুল করিম বলেন, ‘অপরিচিত কাউকে দেখলে ঘরের দরজা খুলতেন না শামীমা। শুরুতে আমাদের হাতে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের সূত্র ছিল শুধু এই একটি বাক্যই। আমরা ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। নিশ্চিত হই বাইরের কেউ এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নন। শামীমার প্রতিবেশি কেউ এ খুনের সাথে সম্পৃক্ত। এ সময় শামীমার পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া জাফরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অবশ্য তার হাতে কামড়ের দাগ দেখে আমরা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে।’

ওসি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জাফর পুলিশকে জানিয়েছে- বেকার অবস্থায় আর্থিক সংকটে পড়ে শামীমার বাসা থেকে টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুটের পরিকল্পনা করেছিল জাফর। হত্যাকাণ্ডের পর নিজের বাসায় গিয়ে রাত পার করে জাফর। এ সময় তার স্ত্রী পর্যন্ত জানতে পারেননি যে, জাফর পাশের বাসার শামীমাকে খুন করেছে।

হত্যাকণ্ডের ঘটনায় শামীমার ছোট ভাই বাদী হয়ে জাফরকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান ওসি আব্দুল করিম।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

খুন টপ নিউজ নির্বিকার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর