বাংলাদেশ-হংকং বাণিজ্য-বিনিয়োগ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৪২
ঢাকা: বাংলাদেশ ও হংকং’র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি। এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং হংকং ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এইচকেটিডিসি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘হংকং-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সচিব শরিফা খান।
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘হংকং ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে। যার বেশিরভাগই টেক্সটাইল ও জ্বালানি খাতে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।’
তিনি জানান, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ নানাবিধ শুল্ক সুবিধা দিয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে হংকং-এর উদ্যোক্তারা এদেশে আরও বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশে হংকং-এর বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং এদেশের উদ্যোক্তাদের হংকং-এ বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণে এইচকেটিডিসি কে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের অভিযাত্রাকে সক্রিয় করতে বিশেষকরে অবকাঠামো, আর্থিক, সেবা, উৎপাদনশীল প্রভৃতি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের রয়েছে তরুণ ও দক্ষ শ্রমিক, সেইসঙ্গে বর্তমান সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত ইতিবাচক, যার ফলে বিদেশি উদ্যোক্তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বেশ বড় ও শক্তিশালী, যেটি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার বিষয়টিকে উদ্বুদ্ধ করবে। দেশে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকে আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইনের সংস্কার ও নতুন নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে।’
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও হংকং-এর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি অত্যন্ত বেশি এবং তা কমিয়ে আনতে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারণে আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে এইচকেটিডিসি’র দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক কনসালটেন্ট রাজেশ ভাগত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘সহজতর কর ও শুল্ক কাঠামো, প্রায় ৭০টি বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও নামিদামি ব্র্যান্ডের কার্যালয়, বৃহত্তর পুঁজিবাজার, আধুনিক অবকাঠামো ও বন্দর সুবিধার উপস্থিতি হংকং-কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিগণিত করেছে।’
তিনি জানান, হংকং’র বেশকিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ১৫০টি প্রকল্পে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশসমূহের মধ্যে হংকং ৮ম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ, কৃষি, চামড়া ও পাদুকা, হালকা প্রকৌশল, অটোমোটিভ, ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক্স, লজিস্টিক অবকাঠামো, আর্থিক খাত, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেমিনারে আলোচনায় আরও অংশ নেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জনেন্দ্র নাথ সরকার এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ ইরফান শরীফ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম