Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিতু হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:২৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো : স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে জমা দেওয়া অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্র পর্যালোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ১০ অক্টোবর সময় নির্ধারণ করেছেন আদালত।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আব্দুল হালিমের আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি-প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র আদালতে নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেনের (পিবিআই) পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। লাগেজভর্তি করে তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগপত্রটি জমা দেওয়ার সময় তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পিবিআই মেট্রোর পুলিশ সুপার কাজী নাইমা হাছানও ছিলেন।

জানতে চাইলে এডিসি-প্রসিকিউশন কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেছি। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় সেটি দেখে সই করে নথিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে সেটি গ্রহণ করবেন কি না অথবা এ বিষয়ে অন্য কোনো আদেশ দেবেন কি না, নারাজি আবেদন থাকলে এর শুনানিসহ সার্বিক বিষয়ে ১০ অক্টোবর সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছেন আদালত।’

অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া।

আসামিদের মধ্যে কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা ও খাইরুল ইসলাম কালুকে পলাতক দেখানো হয়েছে। জামিনে আছেন এহতেশামুল হক ভোলাইয়া। আর কারাগারে আছেন- বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন এবং শাহজাহান মিয়া।

পিবিআইয়ের জমা দেওয়া ২০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে মোট ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। অভিযোগপত্রের সঙ্গে ২১ ধরনের আলামত জমা দেওয়া হয়। দুই হাজার ৮৪ পাতার কেস ডকেটে আসামি ও সাক্ষীদের জবানবন্দিসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত বিদেশি এক নারীর সঙ্গে বাবুলের পরকীয়ার জড়িয়ে পড়া নিয়ে তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এর জেরে বাবুল আক্তার স্ত্রী মিতুকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন। তিন লাখ টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করে স্ত্রীকে খুন করায়। নিজেকে আড়ালে রাখতে প্রচার করেন- জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে। মিতুকে খুনের মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের ‘সোর্স’ মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। সঙ্গে ছিল আরও ছয়জন। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল মুসাকে ফোনে নির্দেশ দেন- গা ঢাকা দেওয়ার জন্য।

২০২০ সালে মিতু হত্যা মামলার তদন্তভার পাওয়ার আড়াই বছর পর পিবিআই চাঞ্চল্যকর মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে। এর আগে নগর গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমেও মামলাটির তদন্ত করা হয়েছিল। তবে তারা তদন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তার চাকরিতে ইস্তফা দেন। শুরুতে জঙ্গিরা মিতুকে খুন করেছে এমন প্রচারণা চললেও বাবুলের চাকরিতে ইস্তফা দেওয়ার পর তিনি নিজেই এই খুনে জড়িত বলে গুঞ্জন শুরু হয়।

হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ সরাসরি প্রকাশ করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।

২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন বাবুল আক্তারের মামলায় আদালতে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়, যাতে উল্লেখ করা হয়- তদন্তে ঘটনার সঙ্গে বাদী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পিবিআই হেফাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে ১২ মে মোশাররফের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর আদালতে দেওয়া গ্রেফতার ভোলাইয়া, বাবুলের ঘনিষ্ঠ সাইফুল হক, গাজী আল মামুন, মোকলেসুর রহমান ইরাদ এবং আসামি মুসার স্ত্রী পান্না আক্তারের জবানবন্দিতে বাবুলের সম্পৃক্ততার তথ্য আরও জোরালো হয়। তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এসব জবানবন্দির এক পর্যায়ে নিজের মামলায় পিবিআইয়ের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন দাখিল করেন বাবুল আক্তার।

২০২১ সালের ৩ নভেম্বর শুনানি শেষে আদালত বাবুল আক্তারের নারাজি আবেদন প্রত্যাখান করেন। একইসঙ্গে পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনও প্রত্যাখান করে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। ফলে মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলাটির পাশাপাশি করা বাবুল আক্তারের মামলাটিও সক্রিয় হয়ে যায়। দুই মামলার সমান্তরাল তদন্তভার এসে পড়ে পিবিআইয়ের ওপর।

ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারকে তার নিজের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করে বাবুলকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। এরপর ২৫ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে মোশাররফের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। একইসঙ্গে ওই মামলার ডকেট প্রথম মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে তদন্তের জন্য আবেদন করেন। আদালত অনুমতি দিলে শুধুমাত্র বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলাটির তদন্তই চলমান থাকে।

গ্রেফতারের এক বছর চার মাস পর গত ৮ সেপ্টেম্বর ফেনী কারাগারে বন্দী বাবুল আক্তার আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা হলেন- পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. নাজমুল হাসান, মেট্রোর পুলিশ সুপার কাজী নাইমা হাছান, পিবিআইয়ের সাবেক পরিদর্শক বর্তমানে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা ও বর্তমানে সহকারী পুলিশ কমিশনার (পাহাড়তলী জোন) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম এবং পিবিআইয়ের জেলা পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবির।

১২ সেপ্টেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে দাখিল করা আরেকটি আবেদনে বাবুল আক্তার অভিযোগ করেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জেলকোড অনুসরণ না করে ফেনী কারাগারে প্রবেশ করে বাবুল আক্তারের কক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশি চালান। হেফাজতে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে বাবুল আক্তার যে ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন, তাদের নির্দেশে ও প্ররোচনায় এ তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে নিরাপত্তার আবেদন করেন তিনি। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জেবুন্নেছা বেগম উভয় আবেদনের শুনানির জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর সময় নির্ধারণ করেছেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

অভিযোগ আদালতে টপ নিউজ মিতু হত্যা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০০

সম্পর্কিত খবর