দেশীয় কোম্পানি থেকে কেনা হবে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৫৫
ঢাকা: দেশীয় কোম্পানি থেকে কেনা হবে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার। এতে ব্যয় সাশ্রয়সহ ক্রয় পরবর্তী সেবা ও স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য সংশোধন করা হচ্ছে ক্রয় পদ্ধতি। ডেসকো এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার সরবরাহ ও স্থাপন প্রকল্পে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাওসার আমীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করে জানা গেছে ওটিএমের (ওপেন টেন্ডার ম্যাথড) পরিবর্তে ডিপিএম (ডাইরেক্ট টেন্ডার মেথড) পদ্ধতিতে সরকারি মালিকানাধীন দেশীয় কোম্পানির কাছ থেকে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার কেনা হলেও সাশ্রয়ী মূল্যে ভালোমানের মিটার পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ২০২০ সালের ২৪ জুন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিতরণ সংস্থা, কোম্পানি স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ে মিটার সংগ্রহের জন্য স্মার্ট মিটার প্রস্তুত করে সরকারি মালিকানাধীন দুটি দেশীয় কোম্পানি। কোম্পানি দুটি হলো- বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশ পাওয়ার ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। এই দুটি কোম্পানির কাছ থেকে ডিপিএম পদ্ধতিতে যৌক্তিক মূল্যে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার কেনা যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেজন্য সিপিটিইউয়ের মতামত নিয়ে ডেসকো বোর্ড এবং পিএসসি সভার সিদ্ধান্তের জন্য স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারের ক্রয় পদ্ধতি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ডিপিএম পদ্ধতিতে মিটারগুলো কেনা হলে একদিকে যেমন অর্থ সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে দেশীয় কোম্পানির বিকাশ ও যথাযথ বিক্রয়ের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’ এ পর্যায়ে শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান দেশীয় কোম্পানি থেকে মিটারগুলো যথাসময়ে সরবরাহ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে— চাহিদা মোতাবেক মিটারগুলোর সরবরাহ পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার ওপেন টেন্ডার মেথর্ড (ওটিএম) পদ্ধতির পরিবর্তে ডায়রেক্ট টেন্ডার মেথর্ড (ডিপিএম) পদ্ধতিতে ক্রয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকালে প্রয়োজনের জন্য প্রি-পেমেন্ট মিটার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের পরিমাণ পরিবর্তন এবং মিটার টেস্টিং যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থানীয় প্রশিক্ষণ অঙ্গ দুটি বাদ দেওয়াসহ প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণের জন্য প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’
পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শিল্প শক্তি বিভাগের যুগ্ম প্রধান (বিদ্যুৎ) জানান, প্রকল্প এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সিস্টেম লস হ্রাস, শতভাগ রাজস্ব আদায়সহ অনুমোদিত লোডের চেয়ে অধিক লোড বহারকারী গ্রাহকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট মোট ১৮৬ কোটি ৫০ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। এরপর এনইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম বিভাগ হতে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর এবং পরিকল্পনা কমিশন দুই বছর বৃদ্ধি করে গত বছরের জুন হতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১৮৫ কোটি ৭৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা এবং মেয়াদ ২০১৮ সালের ১ লা জুলাই হতে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রকল্পের মোট ব্যয় মুল অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) চেয়ে ৭৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা কমেছে।
সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বলেন, ‘এমটিবিএফে বিদ্যুৎ বিভাগের ফিসক্যাল গ্যাপ নেগেটিভ সত্ত্বেও প্রকল্পটিতে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি খাতে মোট ১৭৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি খাতের এ অর্থায়ন কীভাবে সমন্বয় করা হবে সে বিষয়ে পুনর্গঠিত আরডিপিপিতে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা আবশ্যক। এছাড়াও আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য ডিপিএম পদ্ধতিতে মিটারগুলো ক্রয় করা হলেও এর গুণগতমান যেন নিশ্চিত করা হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেন।’
আইএমইডির পরিচালক বলেন, ‘লগফ্রেমে লক্ষ্য এর যাচাইয়ের (এমওভি) হিসাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সঙ্গে আরও কয়েকটি দফতরকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।’ এছাড়াও তিনি লগফ্রেমে উল্লিখিত জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতির পরিবর্তে শুধুমাত্র একটি পদ্ধতি উল্লেখ করে ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন।
সভায় জিইডির যুগ্মপ্রধান বলেন, ‘প্রকল্পটি লাল শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় পরিবেশগত ছাড়পত্র আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ জারি করা পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের ব্যয় স্থগিত বা হ্রাস করার নির্দেশনা দেন তিনি। এছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় প্রাক্কলনে একক ও পরিমাণ হিসেবে থোক বা লট পরিহার করে যথাসম্ভব সুনির্দিষ্ট করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।’
সারাবাংলা/জেজে/এনএস