Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভুয়া তালিকা তৈরি করে চাল আত্মসাতের অভিযোগ ডিলারের বিরুদ্ধে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪০

শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ভুয়া তালিকা তৈরি করে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দেওয়া চাল বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে জেলার সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক ডিলারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ডিলার মো. সেলিম রেজা দুলাল ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালামের ছেলে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনকে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয়রা জানায়, চেয়ারম্যান থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ ছেলের নামে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ পাইয়ে দেন আব্দুস সালাম। পরে অনিয়ম করে নামে-বেনামে ভুয়া তালিকা করে কার্ডে বানান তিনি। একাধিক কার্ডের নিজেদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে সেই চাল তুলে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। বছরের পর বছর এ কাজ করলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তালিকাভুক্ত পরিবারগুলো। বর্তমানে চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলেও ওই কার্ডগুলোর চাল আত্মসাৎ করছেন সেলিম।

এদিকে বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান বকুল। ওই অভিযোগপত্রে সই করেছেন শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তরিকুল ইসলাম ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ ৫ ইউপি সদস্য। এ ঘটনায় সেলিমের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ বাতিলসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

অভিযোগে বলা হয়, গত ২০১৬-২০২১ মেয়াদে নির্বাচিত শাহজাহানপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম স্বেচ্ছাচারিতা এবং অনিয়ম করে তালিকা তৈরির মাধ্যমে চাল বিক্রি করে আসছেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর ছেলে সেলিম রেজা দুলালকে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার পর থেকেই এই কাজ করছেন তিনি। তালিকায় একাধিক কার্ডের নিজেদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে সেই চাল তুলে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। সম্প্রতি সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন তালিকাভুক্ত করার নিয়ম চালু করেছেন। সেখানেও প্রায় ১৫৬টি কার্ডের কোনো হদিস মেলেনি। এছাড়াও নিজেদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অনেক নামের তালিকা দিয়ে নিজেরাই সুবিধা ভোগ করছেন ডিলার সেলিম। অন্যদিকে, দরিদ্র এলাকা হলেও একই পরিবারে ২টি/৩টি এবং একাধিক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড দিয়েছেন অজ্ঞাত কারণে। এতে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত দরিদ্র পরিবারগুলো।

সেখানে আরও বলা হয়, শাহজাহানপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় মোট সুবিধোভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৩৯ জন। এর মধ্যে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডেরই প্রায় ১৭৯ জনের মধ্যে ১৯ জনের ভুয়া নাম এবং মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে অনিয়ম করে তালিকা বানিয়ে বছরের পর বছর চাল বিক্রি করছেন সেলিম। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাবা-ছেলে মিলে অসৎ উপায়ে সরকারি চাল বিক্রি করে অর্থ আয় করে আসলেও স্থানীয় খাদ্য দফতর বা বিতরণকারী কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) তা চিহ্নিত করতে পারেননি। এতে করে দফতরের কর্মকর্তাদের কাজ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

শাহজাহানপুর ইউনিয়নের জহরুল (কার্ড নম্বর-৬৪), তার স্ত্রী (১৬১) ও মেয়ে সুমাইয়ার (১৬৪) কার্ড করা হয়েছে। মানে একই বাড়িতে ৩টি কার্ড। চেনুয়ারা (কার্ড নম্বর-৬৭) ও তার স্বামী সফিকুল (৬৮) একই বাড়িতে ২টি। বেলাল (৮৩) ও তার স্ত্রী এবং উত্তরা খাতুন ও স্বামী ফেকনের ( ১৪২) নামে একাধিক কার্ড তৈরি করে দেওয়া হয়। তবে এসব পরিবারকে একটি কার্ডের চাল দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি স্বীকার করে পরিবারগুলো জানান, নিজ নামের কার্ডের চাল পেয়েছেন তারা। এছাড়া বাকি কার্ডগুলোর চাল সাবেক চেয়ারম্যান ও তার ছেলে ডিলার সেলিম নিয়েছেন।

এছাড়াও একই বাড়িতে স্বামী আজাদ আলী ( কার্ড নম্বর-২১) ও স্ত্রী (১১৭৪) এবং রূপসী (৮৫) ও তার স্বামী জিয়ারুলের নামে কার্ড তৈরি করা হয়। এমনকি ফাতেমা ও তার প্রকৃত স্বামী এবং স্বামীর নাম পরিবর্তন করে (পরিবর্তিত নাম রুহুল আমিন, কার্ড নম্বর-১৬৫) একই বাড়িতে মোট ৩টি কার্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২টি কার্ডের চাল ডিলার মেলিম আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শাহজাহানপুর ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার আগের ট্যাগ অফিসার মমতাজুর রহমানের সময়ে এই তালিকাগুলো করা হয়।’ তদারকির দায়িত্বের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললেও কোনো কথাতেই জনপ্রতিধিরা কর্ণপাত করেন না। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সেটা সংশোধন হওয়া দরকার।’

শাহজাহানপুর ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবু তাহের বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে একই নামে ৩টি, ২টি এবং একাধিক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের কার্ড দিয়ে চাল তুলে নিজেরা ভোগ করেছেন তৎকালীন চেয়ারম্যান সালাম ও তার ছেলে। এসব কার্ড অনলাইন করার সময় ধরা পড়ে। অনিয়ম হওয়া এসব কার্ড সংশোধন করা হলে সরকারের বরাদ্দকৃত চাল প্রকৃত পরিবারগুলো পাবে।’

শাহজাহানপুর বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার খাদ্য দফতরের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে কয়েক বছর ধরেই অনিয়ম করে ২ শতাধিক কার্ডের চাল তুলে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে আসছেন ডিলার সেলিম ও তার পিতা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম। এতে আসল অসহায় পরিবারগুলো বঞ্চিত হচ্ছেন।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ‘ভুলবশত শাহজাহানপুর ইউনিয়নে ১০ থেকে ১২টি কার্ডে অমিল হয়ে থাকতে পারে। তবে জেনে-শুনে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। সরকারের খাদ্যবান্ধব চালের কার্ডের বিষয়গুলো ট্যাগ অফিসার, চৌকিদারদের দিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়।’ তবে ১৫৫ বা ২ শতাধিক কার্ডে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে ডিলার সেলিম রেজা দুলাল বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া কার্ডের বিনিময়ে চাল দিয়েছি। কোনো চাল আত্মসাৎ করা হয়নি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহান বলেন, ‘সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নে সরকারের খাদ্যবান্ধব কার্ড ও তালিকায় অনিয়মের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক তথ্য জানানোর বিষয়টি খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/এনএস

খাদ্যবান্ধব খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর