মরুভূমির ফল মধুমতির চরে, প্রকৌশলী এখন সফল কৃষক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪৯
বাগেরহাট: প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ চাকরি ছেড়ে হয়েছেন কৃষক। তার ক্ষেতে লাগিয়েছেন মরুভূমির ফল রকমেলন, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত সাম্মাম নামে। তরমুজ আকৃতির এই ফল বিক্রি করে তিনি এখন বছরে আয় করছেন ১৫ লাখেরও বেশি টাকা।
বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার গাড়ফা গ্রামের শেখ টিপু সুলতানের বড় ছেলে ফয়সাল আহমেদ। তিনি ২০২০ সালে ৪৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে মোল্লাহাট উপজেলার চর উদয়পুর এলাকায় মধুমতি নদীর পাড়ে চাষাবাদ শুরু করেন। বর্তমানে দেড় একর জমিতে প্রায় ১০ হাজার সাম্মাম গাছ রয়েছে।
প্রতি আড়াই মাস পর পর মাত্র দেড় একর জমি থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার সাম্মাম বিক্রি করেন এই প্রকৌশলী। জমি প্রস্তুত, বীজ রোপণ, মাচা তৈরি, আগাছা পরিস্কার, সার-ওষুধসহ সব ধরণের খরচের পরও বছরে এই ১৫ লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
চাহিদা থাকায় অনেকেই এখন সাম্মাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। প্রতিটি সাম্মামের ওজন দুই থেকে তিন কেজি, যা পাইকারি দরে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
প্রকৌশলী ফয়সাল বলেন, ‘চাকরি ছেড়ে আসার পর আমি এই সাম্মামের বীজ সংগ্রহ করি। এই ফলে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। আমাদের দেশে সাম্মামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে আমার ক্ষেতে ফলনও ভাল হয়েছে। বছরের সব সময়ে এই ফল চাষ করা যায়। রোপণ থেকে শুরু করে, বিক্রি পর্যন্ত ৭৫দিন সময় লাগে। বছরে ৪ বার চাষ করা যায়। প্রতিবার চাষ করতে সার, বীজ ও মাচা তৈরি করতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়।’
সাম্মামের পাশাপাশি তিনি বারোমাসি তরমুজ, বেগুন, পেঁপে ও আখসহ নানা ধরনের ফল উৎপাদন করে থাকেন বলেও জানান। বর্তমানে দেড় একর জমিতে প্রায় ১০ হাজার সাম্মাম গাছ রয়েছে।
এছাড়াও সাড়ে সাত একর জমিতে ৭ হাজার টমেটো, শতাধিক টপলেডি জাতের পেঁপে, ১৫০০ ব্ল্যাকবেরি বারোমাসি তরমুজ, ৩ হাজার ফিলিপাইনের কালো আখ, ৬০০ বেগুন গাছতার ক্ষেত রয়েছে। এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের আম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা জাতের ফল গাছ রয়েছে ফয়সালের খামারে।
ফয়সাল আহমেদের বাবা শেখ টিপু সুলতান বলেন, ‘ফয়সাল যখন বললো সে চাকরি ছেড়ে কৃষিকাজ করতে চায়, তখন আমি বিরোধিতা করেছিলাম। পরে তার সফলতা দেখে তার কাজে সহায়তা করছি। তার ক্ষেতে প্রতিদিন ১২ জন লোক পরিচর্যার জন্য নিয়োজিত আছে।’
মোল্লাহাট উপাজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালা বলেন, ‘মরু অঞ্চলের ফল এই ফলটি রকমেলন বা হানিডিউ মেলন নামে পরিচিত। আমাদের দেশে সাম্মাম নামে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বাগেরহাটে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে ফলটির চাষ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা করা হচ্ছে। আরও কেউ যদি সাম্মাম চাষ করতে চায়, তাহলে তাকেও আমরা সহযোগিতা করব।’
সারাবাংলা/এমও