Saturday 10 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অখেলোয়াড়সুলভ আচরণে পরাস্ত শাহজালাল, চ্যাম্পিয়ন জীবন


২৫ এপ্রিল ২০১৮ ২০:০২ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:৪০

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে শুরু হয় ফাইনাল রাউন্ড। চূড়ান্ত পর্বে দুই প্রতিযোগী কক্সবাজারের চকরিয়ার তারিকুল ইসলাম জীবন এবং কুমিল্লার হোমনার শাহজালাল। সুঠাম দেহের দুই বলী ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে’ এই অবস্থা।

মাঠজুড়ে হাজার হাজার দর্শকের অধীর প্রতীক্ষা। টানটান উত্তেজনা। টানা ১৪ মিনিটেরও বেশি খেলার পরও কেউ যখন কাউকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না তখন প্রধান রেফারি আব্দুল মালেক বিজয়ী ঘোষণা করলেন জীবনকে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন শাহজালাল। দর্শকদের মধ্যেও কৌতূহল। পরে এই কৌতূহলের জবাব দিলেন এম এ মালেক নিজেই।

তিনি জানালেন, শাহজালালকে বারবার সতর্ক করার পরও নিয়ম ভেঙে বারবার মাথা দিয়ে জীবনের মাথায় আঘাত করছিলেন। দুই হাত দিয়ে তার পা টেনে ধরছিলেন। এটা নিয়ম বর্হিভূত। অখেলোয়ারসুলভ আচরণের কারণে শাহজালালকে বাদ দিয়ে জীবনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

দর্শকরা হাততালি দিয়ে ঢোল, বাঁশি ও ভুভুজেলার বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে বিজয়ী জীবনকে অভিনন্দন জানান।

বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যুবসমাজকে জাগাতে ১৯০৯ সালে শুরু হওয়া এই আব্দুল জব্বারের বলী খেলার এবার ১০৯তম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও বলীখেলা দেখতে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছেন নগরীর লালদিঘীর মাঠে।

৫ ফুট উঁচু ও ৪০০ বর্গফুটের বালীর মঞ্চে দুই রাউন্ডে বিভক্ত খেলায় অংশ নিয়েছেন ৮৬ জন বলী। এর মধ্যে প্রথম রাউন্ড কিংবা প্রাথমিক রাউন্ডে নিয়েছেন ৭৮ জন এবং চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে নিয়েছেন ৮ জন। চ্যালেঞ্জ রাউন্ড থেকেই বিজয়ী ও রানার্স আপ নির্ধারিত হয়।

বিজ্ঞাপন

চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে অংশগ্রহণকারীরা হলেন, খাগড়াছড়ির সুমন চাকমা, কুমিল্লার হোমনার শাহজালাল, চট্টগ্রাম নগরীর আছাদগঞ্জের হাশেম, কক্সবাজারের চকরিয়ার তারিকুল ইসলাম জীবন, মহেশখালীর মোহাম্মদ হোসেন ও সৈয়দ নূর, উখিয়ার জয়নাল ও চাঁদপুরের সালাহউদ্দিন।

প্রথম রাউন্ড শেষে কোয়ার্টার ফাইনালের মধ্য দিয়ে চ্যালেঞ্জ রাউন্ডের শুরু হয় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে। সুমন চাকমা ও জীবন, হাশেম ও শাহজালাল, সালাহউদ্দিন ও জয়নাল এবং মোহাম্মদ হোসেন ও সৈয়দ নূরের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। জয়ী হয়ে সেমিফাইনালে যান জয়নাল, জীবন, শাহজালাল ও হোসেন।

টসে জিতে জয়নাল ও জীবন এবং শাহজালাল ও হোসেন পরস্পরের মুখোমুখি হন। ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ড কুস্তি লড়ে জীবন হারান জয়নালকে। আর ৪ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড লড়ে শাহজালাল হারান হোসেনকে।

এরপর চূড়ান্ত পর্বে মুখোমুখি হন শাহজালাল ও জীবন। পরাজয় মানতে না পেরে শাহজালাল সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে অন্যায়ভাবে হারানো হয়েছে। আমি এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

অন্যদিকে বিজয়ী জীবন বলেন, আমার প্রত্যাশা ছিল আমি জিতব। আমি জিতেছি।

এর আগে বিকেল ৪টায় চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মাসুদ-উল-হাসানসহ অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের রিজিওনাল ডিরেক্টর সৌমেন মিত্র এবং আব্দুল জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীও ছিলেন।

মেয়র বলেন, এই বলীখেলা শুধু চট্টগ্রামের উৎসব নয়। এটি দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার উৎসব। এই বলীখেলাকে কিভাবে আরও দৃষ্টিনন্দন, আকর্ষণীয় এবং সুশৃঙ্খল করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা মেয়র আরও বলেন, আমরা সিজেকেএসের পক্ষ থেকে একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি করছি। সেখানে বলির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বলি শুধু ধরলেই হবে না, কৌশল জানতে হবে। প্রশিক্ষিত বলি তৈরি করতে হবে।

জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, বলিখেলায় পেশাদার বলির অভাব থাকলেও সৌখিন বলিরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিবছর আসেন। সবার কাছে এটা একটা উৎসব। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাঙালির চিরন্তন উৎসব। বলিখেলাকে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলাও চলছে। লাখ লাখ মানুষ মেলায় আসছেন। বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে, চট্টগ্রাম যতদিন থাকবে এই সার্বজনীন উৎসবও থাকবে।

এ দিকে নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে লালদিঘী পর্যন্ত সড়কজুড়ে চলছে মেলা। সেই মেলায় মিলছে গৃহস্থালী পণ্য থেকে শুরু করে আসবাবপত্র, ঘর সাজানোর মাটির জিনিস, মজাদার খাবার, গাছের চারা পর্যন্ত। চলছে দেদারসে বিকিকিনি।

বলিখেলা ও মেলা উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)।

সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, বলিখেলার মাঠ এবং মেলাজুড়ে প্রায় ৫০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মেলায় যত প্রবেশপথ আছে সবগুলোতে চেকপোস্ট আছে। আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। মেলার ভেতরে যেখানে জনসমাগম বেশি হবে সেখানে পিকেট টিম আছে। ফুট পেট্রল টিম আছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তার মধ্যে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা টিমও আছে।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর