ফরমের টাকা আত্মসাৎ অধ্যক্ষের, এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারল না পল্লব
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৩৯
লালমনিরহাট: যখন ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বেলা ১১টা। পরীক্ষার্থীরা সবাই কেন্দ্রে ঢুকে গেছে। অথচ একজন পরীক্ষার্থী কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এমনই দৃশ্য দেখা গেলো।
ওই পরীক্ষার্থীর নাম পল্লব রায়। সে উপজেলার শংকর বাজার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিএম কলেজের কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে কথা হয় পল্লব রায় এর সঙ্গে। সে জানায়, নির্ধারিত সময়ে সে তার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অধ্যক্ষ যামিনী রায়ের কাছে ছয় হাজার টাকা দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছিল। তবে ঠিক পরীক্ষার আগের দিন শেষ বিকালে তাকে দেওয়া হয় সুব্রত নামের একটি ভুল এডমিট কার্ড।
ততক্ষণে তার পরীক্ষা দেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এরইমধ্যে ওই রাতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করা হলে তারা পরামর্শ দেন যে, ওই অধ্যক্ষকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারলে একটা সমাধান হতে পারে।
পরে অধ্যক্ষের সঙ্গে মোবাইল ফোন একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ওই শিক্ষার্থী রাতে অধ্যক্ষের বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, ‘সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে আমি সব ঠিক করে দিবো’। কিন্তু সকালে আর অধ্যক্ষের দেখা মেলেনি।
পরীক্ষার দিন কাগজপত্রের সঠিক হদিস না মিললে কেন্দ্র সচিব ও কেন্দ্রের সভাপতি তার ডাটাবেইজ ঘেঁটে দেখতে পেলেন, পল্লব বানিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য রেজিস্ট্রেশন করা ৯ম শ্রেণির একজন ছাত্র! অথচ সে শংকর বাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যন্ড বিএম কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী। অধ্যক্ষের দুর্নীতির কারণে সঠিক কাগজ না পাওয়ায় সে পরীক্ষা দিতে পারেনি। এজন্য তার বন্ধুরা পরীক্ষার রুমে ঢুকে গেলেও সে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে কান্না করছিল।
পল্লব আরও জানায়, তার বাবা একজন কৃষক। সে একমাত্র ছেলে। পরিবারের কষ্ট ঘোচাতে সে নিজেও পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে অর্থ উর্পাজন করে। তার ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে একটি চাকরি করে সংসারের অভাব ঘোচাবে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ যামিনী রায় তার ফরম পূরণের টাকা বোর্ডে জমা না করায় সে পরীক্ষা দিতে পারলো না।
শংকর বাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজের সহকারী শিক্ষক জানান, পল্লব রায় একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলেন। সে অধ্যক্ষের কাছে ফরম পূরণের টাকা দিয়েছিল। কিন্তু তিনি ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এজন্য পল্লব রায় পরীক্ষা দিতে পারছে না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে এখন আর তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর সুযোগ নেই। ওই পরীক্ষার্থী চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাকে পল্লবের অবিভাবক বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন। তখন অনেক চেষ্টা করেছি সামাধানের কিন্তু অধ্যক্ষকে না পাওয়ায় কোনো কিছু করা সম্ভব হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টিতে আমরা আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।’
সারাবাংলা/এমও