Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামের ডিসি’কে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:০৯

মোনাজাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মমিনুর রহমান (ছবিতে বাম পাশ থেকে প্রথমজন)

ঢাকা: চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের বিজয় কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেওয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘গত দুইদিন আগে আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে একটি দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে তার বিজয় কামনা করে দলীয় নেতাদের সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি আরও কিছু পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। যা আমাদের নজরে এসেছে। একজন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে তিনি এটা করতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘মাঝে দুইদিন সরকারি ছুটি থাকায় আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘বিদ্রোহী যারা আসছে তারা একই দলের। দীর্ঘদিন ধরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে নেই। তারপর প্রশাসকই আসল, এই অবস্থায় তো চলা যায় না। প্রশাসক আর নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য আছে। মন্ত্রণালয় থেকে বলার পর আমরা নির্বাচন দিলাম। আমাদের কাজ নির্বাচনটা করা। তাই দলীয়ভাবে হচ্ছে না কি হচ্ছে সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। একজন দাঁড়াচ্ছে, আরেকজন দাঁড়াচ্ছেন না। কাজেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াটা বেআইনি নয়। আবার নির্বাচন কেউ অংশ নিতে পারবে না, এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে, তা তো নয়। আমরা চাচ্ছি সবাই নির্বাচনে আসুক। কিন্তু কেউ যদি না আসে, কেমন করে তাদের আমরা আনবো।’

ইসি কমিশনার বলেন, ‘দেশে অনেক ঘটনাই ঘটছে, তা কারও আকাঙ্ক্ষিত নয়। ছোটবেলায় আমরা দেখেছি স্থানীয় নির্বাচন দলীয় নয়। কিন্তু অলিখিতভাবে অনেক কিছু হয়ে যায়। এটা বন্ধ করা কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোরই কাজ। এটা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে এখন আমরা নির্দ্বিধায় আমাদের সিদ্ধান্ত নেবো। আওয়ামী লীগ, বিএনপি এগুলো কিন্তু আমরা আমলে নেবো না। ইতিপূর্বেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘আ.লীগ প্রার্থীর জয় চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার মোনাজাত ও বক্তৃতা!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় সারাবাংলায়। সেই সংবাদে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে ‍উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, নির্বাচন কমিশন অফিসিয়ালি বিষয়টি জানতে পারলে রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (রোববার) সকালে ইসি’র সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

১৫ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ছিল জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষদিন। এদিন সকালে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম রিটার্নিং অফিসার অর্থাৎ জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যান। এসময় জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ জ্যেষ্ঠ্য নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন।

মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য শফর আলী প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের বিজয় কামনা করে মোনাজাত ধরেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকেও হাত তুলে অংশ নিতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে। সেই ভিডিও এবং ছবির ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশিত হয় সারাবাংলায়।

মোনাজাতের পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে বাম পাশে এবং সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে ডান পাশে বসিয়ে উপস্থিত দলটির নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। বক্তব্যে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার যাতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়, সেজন্য বিএনপি-জামায়াতের দোয়া কামনা করেন। জেলা প্রশাসকের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।

বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মমিনুর বলেন, ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এটিএম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করলাম। আজ যাতে একটা সুযোগ পেয়েছি, এখানে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত আছেন, কিছু কথা বলি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ্য তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি, আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চলছে।’

এরপর জেলা প্রশাসক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘আগামী বছর বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এই নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তির হাতে থাকবে নাকি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির হাতে যাবে।’

‘আমি মনে করি যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যদি থাকে, তাহলে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বলি, বিএনপি বলি, জামায়াত বলি, সবাই নিরাপদ থাকবে। আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিৎ শেখ হাসিনা যাতে আবার ক্ষমতায় আসেন।’

আওয়ামী লীগ নেতাদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কমানোরও তাগিদ দেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ছোটখাট ভুল বোঝাবুঝি যদি থাকে, সেগুলোর ঊর্দ্ধে উঠে যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা যাতে স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির হাতে থাকে, সেজন্য আন্তরিকভাবে কাজ করা উচিৎ। জাতির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সবাই একসাথে সবাই কাজ করব, বাংলাদেশকে রক্ষা করব।’

এদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে মোনাজাত ও বক্তৃতা করায় এবং দলের পক্ষে ভোট চাওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা (চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক-ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করে নিতে আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান খান। শনিবার পাঠানো এ নোটিশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সংস্থাপন সচিব (জন প্রশাসন সচিব), ‍নির্বাচন কমিশন সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী (জেলা প্রশাসক) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে বিবাদী করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সারাবাংলা/জিএস/আরডি/এনইউ/এমও

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর