Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হুমায়ূন আহমেদের চিত্রকর্ম আত্মসাৎ: আসামিদের তলব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:০০

ঢাকা: কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের চিত্রকর্ম প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় রুমা চৌধুরী ও তার স্বামী মঞ্জুরুল আজিম পলাশের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন আদালত।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন মামলার পুলিশ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আগামী ২৫ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।

২০২১ সালের ২৯ আগস্ট প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদেও স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এই মামলাটির আবেদন দাখিল করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সম্প্রতি মামলাটি তদন্তের পর অভিযোগে সত্যতা আছে মর্মে পিবিআই আদালত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

মামলার এজহারে বলা হয়, ২০১২ সালে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আমেরিকার নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় গিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে তিনি তার পুত্র নিষাদকে নিয়ে বেশ কিছু ছবি এঁকেছিলেন। ওই সময়ে রুমা চৌধুরী ও তার সাবেক স্বামী বই ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। সেই সূত্রে হুমায়ূন আহমেদ তার আঁকা ২৪টি ছবি তাদের দেন প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। যেগুলো ২০১২ সালের জুন মাসে রুমা চৌধুরী জিম্মায় দেওয়া হয়। শর্ত ছিল প্রদর্শনী শেষে তারা ছবিগুলো হুমায়ূন আহমেদের কাছে ফেরত দিবেন।

প্রদর্শনীর দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে রুমা চৌধুরী ও বিশ্বজিৎ সাহার উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিকভাবে ছবিগুলো বিক্রি করে কমিশন লাভ করা এবং পরবর্তীতে ছবিগুলো আত্মসাৎ করা। এভাবে তার বারবার হুমায়ূন আহমেদকে প্রস্তাব দিলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ছবিগুলো তিনি এঁকেছেন তার নিজের এবং পুত্র নিষাদের আনন্দের জন্য। বিক্রি করে অর্থ লাভের জন্য নয়। এ সময়ে রুমা চৌধুরী গুজব রটান প্রদর্শনীর ২৪টি ছবির মধ্যে ৪টি ছবি হারিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

আরও বলা হয়, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর শাওন দেশে ফিরে আসেন। তিনি রুমা চৌধুরী ও বিশ্বজিৎ সাহার কাছে ছবিগুলো ফেরত চান। বারবার চাওয়া সত্ত্বেও তারা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করে। পরবর্তীতে অভিনেতা ও তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তির সহায়তায় তারা ২০টি ছবি ফেরত দেন হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের জিম্মায়। এ ঘটনা ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের। পরবর্তীতে রুমা চৌধুরীর সঙ্গে বিশ্বজিৎ সাহার বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং তিনি কুমিল্লার মঞ্জুরুল আজিম পলাশকে বিয়ে করেন। ২০১৫ সালে রুমা কুমিল্লায় চলে আসেন পলাশের সঙ্গে বসবাসের উদ্দেশ্যে।

মঞ্জুরুল আজিম পলাশ গত ৩১ মার্চ তার ফেসবুকে কুমিল্লায় লিংকবাংলা শিল্প প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপন দেন। ১ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে একটি ছবি হুমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবি ছিল। যে ছবিটি হুমায়ূন আহমেদের আঁকা হারিয়ে যাওয়া চারটি ছবির একটি বলে প্রতীয়মান হয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় রুমা চৌধুরীর যোগসাজশে মঞ্জুরুল আজিম পলাশ ছবিগুলো অসাধুভাবে আত্মসাৎ করেছেন।

আত্মসাৎ করা হুমায়ুন আহমেদের অঙ্কিত ছবিগুলোর মূল্য শৈল্পিক বা আর্থিক নিক্তিতে পরিমাপ করা সম্ভব না। যা হুমায়ুন আহমেদের জীবনের শেষ দিনগুলোতে তার সঙ্গে পুত্র নিষাদের কাটানো সময়ের স্মৃতি বিজড়িত। আসামিদের কাছ থেকে ছবিগুলো উদ্ধার করা না গেলে তা বেহাত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আর এতে শুধু প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের পরিবারই নয়, সর্বোপরি দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

সারাবাংলা/এআই/এনএস

হুমায়ূন আহমেদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর