মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে পুলিশের রক্তের ইতিহাস রয়েছে: আইজিপি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৪৯
ঢাকা: পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘গত শতকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি মহাত্মা বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব এবং অপরটি মুক্তিযুদ্ধ। এ দু’টি ঘটনা আমাদের চার হাজার বছরের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে। যতদিন এ জাতির অস্তিত্ব থাকবে ততদিন এ দু’টি ঘটনার অনুরণন হবে।’
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, লেখক ও গবেষক হাবিবুর রহমান সংকলিত ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ গ্রন্থের পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ উপলক্ষে পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও গত ৩০ বছর আমরা গণতন্ত্রের দেখা পাইনি। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। যাদের হাতে দেশ লাঞ্ছিত হয়েছে তাদের গাড়িতে আমরা বাংলাদেশের পতাকা দেখেছি।’
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অনবদ্য অবদানের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ব্যাপকতা ও বিশালত্ব ছিল। বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী ছিল বাঙালি পুলিশ, কারণ তারা জানত কী ধরনের বঞ্চনার শিকার তাদেরকে হতে হয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অনন্য অবদানের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘বাঙালি পুলিশ মুক্তিযুদ্ধের সময় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে, গুলি দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে মানুষকে সহায়তা করেছে। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধ জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। যতদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কথা হবে ততদিন পুলিশের বীরত্বের কথা প্রকাশিত হবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে পুলিশের রক্তের ইতিহাস রয়েছে।’
আইজিপি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত একত্রিত হয়ে আজ আমাদের মাথাপিছু আয় তিন হাজার ডলারের ওপরে। করোনায় বিশ্বের অনেক বড় অর্থনৈতিক দেশের প্রবৃদ্ধি কমে গিয়েছিল। অথচ আমাদের প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক ছিল। এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন বলে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর নানা নিপীড়ন, নির্যাতনের কথা তুলে ধরে আইজিপি বলেন, ‘আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের নির্মমতার কথা ভুলে যাই, তাহলে আমাদের অস্তিত্বকে ভুলে যাব। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো আপস নয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আমাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে।’
বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক কথাসাহিত্যিক ড. রতন সিদ্দিকী এবং ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পরিচালক মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে কর্মরত বেতার অপারেটর মো. শাহজাহান মিয়া।
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ গ্রন্থটি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যদের স্মৃতিচারণকে উপজীব্য করে সংকলিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রর্দশন করা হয়। আইজিপি অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
সারাবাংলা/ইউজে/এনএস