আসছে পূজা, প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৩৫
রাজশাহী: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর শিল্পীরা। আগামী এক অক্টোবর থেকে ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর রাজশাহী নগরীসহ জেলার ৯ উপজেলায় ৪৫০টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী মহানগরীতে পূজামণ্ডপ রয়েছে ৭৬টি, বাগমারা উপজেলায় ৮০, দুর্গাপুরে ১৭, বাঘায় ৪৬, চারঘাটে ৪০, তানোর উপজেলায় ৬০, গোদাগাড়ীতে ৩৯, পুঠিয়া উপজেলায় ৫২টি, পবায় ১৮টি ও মোহনপুর উপজেলায় ২২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহী নগরীর গণকপাড়া বৈষ্ণব সভা মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, অরুণ পালের কারখানার শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। কেউ দেবীর গায়ে দিচ্ছেন তুলির আঁচড়, আবার কেউ ব্যস্ত প্রতিমার গায়ে কাঁদামাটির প্রলেপ লাগাতে।
নিতাই পালের ছেলে প্রতিমা শিল্পী অরুণ পাল। অরুণ জানান, তিনি প্রায় ২২ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। প্রতিবছর পূজায় তারাই রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি প্রতিমা তৈরি কাজ পান।
অরুণ পাল বলেন, ‘সামনে ৩০ সেপ্টেম্বর পঞ্চমী। পঞ্চমীর রাতের আগেই আমাদের প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা এখন খুব ব্যস্ত। আষাঢ় মাসের ১ তারিখ থেকে প্রতিমা শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছে। এ বছর ২৬টি প্রতিমা তৈরি করছি। এগুলোর মধ্যে শহরের জন্য ২২টি প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। বাকি চারটির অর্ডার পেয়েছি শহরের বাইরে থেকে।’
অরুণ পাল আরও বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে কাছ শুরু করি কাজ চলে একটানা ভোর ৪টা পর্যন্ত। প্রতিমা তৈরির জন্য আমরা কারখানাতে ৮ জন কাজ করি। কাজ করতে গিয়ে আমাদের অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার উপায় থাকে না। খাওয়া-দাওয়ারও কোনো ঠিক নাই।’
প্রতিমা শিল্পীরা জানান, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিম্ন ২০ হাজার ও সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রতি ভ্যান মাটিতে তাদের খরচ হয় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রতি পৌন আউরে খরচ হয় পাঁচশত টাকা থেকে ছয়শত টাকা। আর বাকি জিনিসগুলোর জন্য খরচ হয় তাদের ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মত। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন।
প্রতিমা তৈরিতে চার থেকে পাঁচজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন বলেও জানান প্রতিমা শিল্পীরা।
এছাড়াও পবা উপজেলার বসন্তপুর বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, শিল্পী সুবোধ কুমার পাল প্রতিমা তৈরি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি জানান, এটা ছাড়াও আরও দুইটি প্রতিমার অর্ডার নিয়েছেন। এবছর তিনটি প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তিনি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি অম্বর সরকার বলেন, ‘এ বছর রাজশাহী নগরীসহ জেলার ৯ টি উপজেলায় মোট ৪৫০টি পূজামণ্ডপে পূজা হবে। এজন্য মন্দিরে বিভিন্ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।’
মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শরৎ সরকার বলেন, ‘এবছর নগরীতে ৭৬টি স্থানে পূজামণ্ডপ নির্মাণ করা হবে। মণ্ডপগুলোতে কাজ চলছে। রাজশাহীতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে আশা করা যায়। আইনশৃঙ্খলার সদস্যারা সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।’
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘রাজশাহী নগরীর সব পূজামণ্ডপের তালিকা আমরা পেয়েছি। মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা দেয়া হবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে আমরা সেদিকেও খেয়াল রাখবো। পূজার আগেই আমরা ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবো।’
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘দুর্গাপূজা উদযাপনের লক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ-র্যাব সদস্যের পাশাপাশি থাকবে সাদা পোশাকে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।’
সারাবাংলা/এমও