।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সামনে নির্বাচন আসছে, আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে শিশুমৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে বলে অঙ্গীকার করলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
বুধবার (২৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজিত ‘প্রতিটি নবজাতককে বাঁচাতে হবে: প্রয়োজন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগিতা করে ইউনিসেফ। ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশ এমডিজি- ৪ অর্জন করেছে এবং শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে তাদের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু নবজাতক মৃত্যুহার হ্রাসে সে তুলনায় অগ্রগতি কম। ১৯৯০ সালে দেশে ২ লাখ ৪১ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হলেও ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা কমে এসেছে ৬২ হাজারে। কিন্তু বিশ্বের যে ১০টি দেশে সবচেয়ে বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয় বাংলাদেশ সেই তালিকাতের রয়ে গেছে ।
গোল টেবিল আলোচনায় নবজাতকের মৃত্যু কেন হয়, মৃত্যুহার হ্রাস করতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার সেসব বিষয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।
আর এ সর্ম্পকে বলতেই গিয়েই স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় একটা অঙ্গীকার থাকবে, যে কোনও মূল্যে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে চাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য হিসেবে আমি এটা বলে যাচ্ছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাল্যবিয়ে যত বন্ধ করা যাবে তত বেশি নিরাপদ মাতৃত্ব হবে, তাই বাল্যবিয়েকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। কারণ একজন মেয়েকে সন্তান ধারণের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে, মা-বোনদের দায়িত্ব নিতে হবে।
শিশুমৃত্যু ও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার ৬০০ ধাত্রী নিয়োগ করেছে, ইউনিসেফ তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আর নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য তাদের গ্রামে এবং বিভিন্ন হেলথ ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে।
একইসঙ্গে স্বাভাবিক প্রসবের পরিবর্তে অস্ত্রোপচার করার প্রবণতার সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সিজার করলে বারবার করতে হয়, এতে অনেক ঝুঁকি থাকে।
কিন্তু সিজার যারা করতে চায় তারা কিছুটা শিক্ষিত, পয়সা-কড়িও আছে। তারা স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে মাতৃত্বের বেদনা সহ্য করতে চায় না, নয় মাস বেদনা সহ্য করে আর প্রসব বেদনা সহ্য করতে চায় না। আর সন্তানকে ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, মায়ের দুধ অমৃতের সমান, এটা থেকে অনেকে সরে যায়-এ নিয়ে কেন ক্যাম্পেইন করতে হবে প্রশ্ন রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলতে চাই, কোনও মা যদি স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানে আসে তাহলে তাকে সেবা দেওয়া হবে, বাংলাদেশ সরকারের সামর্থ্য রয়েছে প্রতিটি মায়ের সেবা দেওয়ার। আমাদের সামর্থ্য রয়েছে, সুযোগ রয়েছে কিন্তু সচেতনতার অভাবে মানুষ সেবা নিতে যেতে চায় না। তাই সচেতনতা সৃষ্টিই আসল চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতেরর মহাপরিচালক কাজী ডা. কাজী মোস্তফা সারোয়ার বলেন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার কমিয়ে আনার জন্য অধিদফতর কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৪, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২২ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যু হার ১৮ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সে সংখ্যা ১২ এ নামিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে আমরা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। অপরদিকে, নবজাতক মৃত্যু হয় তার মধ্যে ৮৮ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ১৯৯০ সালে ২ লাখ ৪১ হাজার শিশু প্রতিবছর মারা যেত যা কীনা ৬২ হাজারে এসে নেমেছে। যদিও এ পরিসংখ্যান উল্লেখযোগ্য অর্জন, কিন্তু তারপরও মনে রাখতে হবে, প্রতিবছর ৬২ হাজার বাবা মা সন্তানহারা হচ্ছেন- এটা বড় বিষয়।
আগে প্রতিহাজার নবজাতকের মধ্যে ৬৪ জন মারা যেত যা কীনা এখন ২০ এ নেমে এসেছে। কিন্তু এ সংখ্যা নামাতে হবে ১২ তে যদি এসডিজি অর্জন করতে হয় বলেন অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সেভ দ্যা চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক মান্নান, ইউনিসেফের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সীমা সেন গুপ্ত, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভেনডেনেন্ট, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিভাগের ম্যানেজার মো. জিয়াউল মতিন।
সারাবাংলা/জেএ/টিএম