সুষ্ঠু নির্বাচন শুধুমাত্র আ.লীগ আমলেই হয়— বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:০৪
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিজে সংগ্রাম করেছেন। আর এ কারণেই শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ আমলেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিবিসিতে প্রচারিত একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি এ সাক্ষাৎকার দেন।
সাক্ষাৎকারে আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে তার সরকারের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে করা বিবিসির সাংবাদিক লরা কুনেসবার্গের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশ্যই, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠার জন্যই আমার সংগ্রাম। সে কারণে শুধু আওয়ামী লীগের আমলেই আপনারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে পাবেন।’
গুম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গুমের বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করতে পারেন, কিন্তু তা কতটা সত্য তা বিচার করতে হবে।’ শেখ হাসিনা বিবিসিকে বলেন, ‘তার দেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, প্রকাশ্যে বা গোপনে সামরিক শাসক ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে আমার বাবাকে (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হত্যা করা হয়। তিনি তখন দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং আপনি জানেন যে, আমার পুরো পরিবার, আমার মা, আমার তিন ভাই, দুই ভ্রাতৃবধু, পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ মোট ১৮ জনকে হত্যা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারপর থেকে ২১ বছর ধরে দেশটি বার বার অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছে।’ তিনি যোগ করেন যে, ‘প্রায় ২০ বার অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে এবং প্রতিবার রক্তপাত হয়েছে।’ শেখ হসিনা বলেন, ‘সেখানে গণতন্ত্র ছিল না, গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। তাই আমি আমার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছি।’
নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই অভিযোগ করতে পারে, কিন্তু এটা কতদূর সত্য, বিচার করতে হবে। এটা জানার আগে কেউ কোনো মন্তব্য করবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘সামরিক শাসকরা দীর্ঘদিন ধরে দেশ শাসন করেছে এবং তারা দল গঠন করেছে এবং ভোটের জন্য তারা কখনো জনগণের কাছে যায়নি। তারা (সামরিক স্বৈরশাসক) সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে, প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য সবকিছু ব্যবহার করেছে।’
নিখোঁজের অভিযোগের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বিবিসি সাংবাদিককে প্রশ্ন করেন, ‘আপনার দেশে এবং অন্যান্য দেশে কত লোক নিখোঁজ হয়েছে? আপনি বিচার করতে পারেন। এই সমস্ত বিষয় আমি মনে করি, প্রথমে আপনাকে (বিবেচনায়) নিতে হবে। সমস্ত তথ্য আপনার সংগ্রহ করা উচিত, তারপর আপনি অভিযুক্ত করতে পারেন।’
আপনার ও বাংলাদেশের কাছে কমনওয়েলথের গুরুত্ব কতটা? এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই (এর মূল্য অনেক বেশি)। যখন আমরা একসাথে থাকি, সেখানে অনেক সুযোগ থাকে। তাই এটা ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের একটা জায়গা আছে যেখানে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করতে পারি। কিছু ধারণা গ্রহণ করতে পারি বা দেশ বা জনগণের জন্য কিছু ভালো কাজ করতে পারি। তাই, আমার মনে হয় এটা ভালো।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, একটি দেশ একা চলতে পারে না। কারণ, এটি একটি আন্তঃনির্ভর বিশ্ব। সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে সদস্য দেশগুলোর জন্য কমনওয়েলথের অর্থ অনেক বড়। প্রতিটি দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।’
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত স্মৃতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৬১ সালে যখন তিনি (রানী) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফর করেছিলেন তখন তাকে (ব্যক্তিগতভাবে প্রথমবার) দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘তখন আমরা খুব ছোট এবং আমার বাবার (বঙ্গবন্ধুর) অফিসে গিয়েছিলাম। কারণ, আমরা জানতাম যে, তিনি সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই আমরা সবাই, মানে পুরো পরিবার দূরবীন নিয়ে জানালায় অপেক্ষা করেছি। সেই দূরবীন দিয়ে আমরা তাকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি প্রায় সাতটি কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। প্রতিবারই আমি তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি।’ তিনি জানান, প্রয়াত রানির আমন্ত্রণে তিনি অলিম্পিক গেমসে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। প্রয়াত রানির সঙ্গে সুন্দর স্মৃতির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘তার (রাণী) চমৎকার স্মৃতিশক্তি ছিল এবং তিনি আমাকে না দেখলে হাসিনা কোথায় ছিলেন বলতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামান্য যুক্তরাজ্যের একজন রানি ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তিনি কমনওয়েলথেরও একজন নেতা। কমনওয়েলথ দেশগুলোর একজন সদস্য হিসেবে তিনি আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান ছিলেন।’
প্রয়াত রানি প্রায় ৭০ বছর ধরে রাজত্ব করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এই বিশ্বের জন্য তিনি কেবল একজন রানিই ছিলেন না, তিনি একজন অত্যন্ত স্নেহময় এবং মাতৃত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বও ছিলেন। যখনই তার সঙ্গে দেখা করেছি, আমি এটি অনুভব করেছি।’
সারাবাংলা/পিটিএম