Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বহুমুখী প্রতারক: নাম ‘বেচতো’ শিক্ষামন্ত্রীর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:৩৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নামে ব্যবসায়ী, আসল কাজ প্রতারণা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সাগর উপকূলে একটি শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক। সেই শিপইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির কথা বলে বিভিন্নজনকে অংশীদার বানিয়ে হাতিয়ে নেয় প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। পুরনো জাহাজে থাকা কনটেইনারে সোনা ও হীরা পেয়েছে বলে হাতিয়ে নেয় আরও কয়েক কোটি টাকা। প্রতারণার এখানেই শেষ নয়!

জাল দলিলে জমি বিক্রি, বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানি খুলে শেয়ার দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়া- এমন অসংখ্য প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এই ব্যক্তি। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নাম ভাঙিয়ে সে এসব প্রতারণা করে বেড়াতো। মানুষের কাছে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করতে শিক্ষামন্ত্রীর কণ্ঠস্বর নকল করে ফোনে কথা বলতো। আবার মন্ত্রী ও তার মধ্যে কথোপকথনের ভুয়া রেকর্ড শোনাত।

বিজ্ঞাপন

প্রতারণার ১১ মামলায় দণ্ডিত মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে (৪২) গ্রেফতারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায়। সীতাকুণ্ডের কুমিরা সাগর উপকূলে খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা আছে তার।

বহুমুখী এই ‘প্রতারকের’ কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে এম এ ইউসুফ জানান, ২০১৫ সালে খাজা শিপইয়ার্ডে শত কোটি টাকার একটি পুরনো জাহাজ আনা হয় বিক্রির জন্য। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মেজবাহ উদ্দিন কয়েক মাসের মধ্যে আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় আট কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাবের তথ্যানুযায়ী, ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ, আজগর আলীর থেকে ৭০ লাখ, রেজওয়ানের ৪০ লাখ, ইব্রাহীমের ২০ লাখ, রুমনের ৬৩ লাখ, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা, জাহিদুল ইসলাম, আসাদ ও বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ করে দেড় কোটি এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির কথা বলে হাতিয়ে নেয় মেজবাহ।

র‌্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ বলেন, ‘পুরনো জাহাজের বাজেয়াপ্ত কনটেইনারে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সোনা এবং দুই হাজার কোটি টাকার হীরা পেয়েছে বলে মেজবাহ প্রচার করে আরেকদফা প্রতারণার জাল বোনেন। একজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের ভুয়া রেকর্ড শুনিয়ে কয়েকজনের কাছে বিশ্বাস স্থাপন করে কথিত সোনা-হীরা বিক্রির কথা বলে হাতিয়ে নেয় আরও কয়েক কোটি টাকা। সে মন্ত্রীর কণ্ঠস্বর নকল করেও কয়েকজন ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, মেজবাহ শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কণ্ঠস্বর নকল করে ও কথোপকথনের ভুয়া রেকর্ড বানিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।

র‌্যাবের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীর বারইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্তত ১০ জনের কাছে বিক্রি করে তিন কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে। অর্থলগ্নিকারী কয়েকটি ভুয়া কোম্পানি খুলে মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে সেখানে শেয়ার বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে আরও কয়েক কোটি টাকা। কেউ লভ্যাংশ দাবি করলে মামলায় ভয় দেখাতো।

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক এম এ ইউসুফ বলেন, ‘কোতোয়ালি এবং হাটহাজারী থানা মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে ২২টি মামলা আছে। এর মধ্যে ১১টি প্রতারণার মামলায় তার সাজা হয়েছে। সাজামূলে পরোয়ানাও আছে। সাজা এড়াতে সে সাত বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে যায়। ঢাকায় এক বাসায় তিন-চার মাসের বেশি থাকত না। একাধিক সিম ব্যবহার করতো। পাল্টে ফেলে বেশভূষা। টাক মাথায় লাগানো হয় আলগা চুল। তবে এরপরও তার শেষরক্ষা হয়নি। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তার প্রতারণার কাহিনী জেনে আমরা তাকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

গ্রেফতার প্রতারক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর