বাড়ছে জাপান-ভারতে পোশাক রফতানি, দেখাচ্ছে আশার আলো
২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:৩৮
ঢাকা: ভারত ও জাপানে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বাড়ছে। গেল দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ভারতে পোশাক রফতানি বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ (বেড়েছে ৯৮.৯২ শতাংশ)। আর জাপানে বেড়েছে ১২০ শতাংশ। সব মিলিয়ে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। ভারত ও জাপানে পোশাক রফতানি বৃদ্ধি খাতটিতে আশার আলো দেখাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই দুই দেশে পোশাক রফতানি আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা খাত সংশ্লিষ্টদের।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম দুই মাসে জাপানে ২১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাকপণ্য রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১৭ কোটি ২৯ লাখ ডলারের পণ্য। এই সময়ে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ২৫.৮১ শতাংশ।
এদিকে, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভারতে পোশাক রফতানি হয়েছে ১৮ কোটি ৮২ লাখ ডলারের। আগের বছর একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ ভারতে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৯৮.৯২ শতাংশ। মালয়েশিয়ায় পোশাক রফতানি বেড়েছে ১১৬ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ২ কোটি ডলার।
তবে যুদ্ধের প্রভাবে পোশাক রফতানি হোঁচট খেয়েছে রাশিয়ার বাজারে। সেখানে ৫৮.২৯ শতাংশ পোশাক রতফতানি কমেছে। প্রথম দুই মাসে চীনে ১৩.২১ শতাংশ কমে রফতানি ৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারে ঠেকেছে।
প্রসঙ্গত, পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের মূল বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। এর বাইরের বাজারগুলো অপ্রচলিত বাজার নামে পরিচিত। এই তালিকায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, চীন, ভারত ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশসহ অন্যান্য দেশ।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে রফতানি বাড়াতে আমরা কাজ করছি। ভবিষ্যতে দেশটিতে আমাদের রফতানি আরও বাড়বে। ভারত থেকে আমরা কিছু প্রাথমিক উপকরণ আনছি। আর আমরা সেখানে ফাইনাল প্রোডাক্ট রফতানি করছি। এতে দুই দেশই উইন-উইন অবস্থায় রয়েছে। ভারতের বাজার নিয়ে আমরা আশাবাদী। একইভাবে জাপানে মার্কেটিং এ কাজ চলছে। সামনে একটি ফেয়ার রয়েছে, সেখানে আমরা অংশ নেবো। জাপানেও ভবিষ্যতে রফতানি আরও বাড়বে।’
দেশের নিট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে আমাদের রফতানি বাড়ছে। সেখানে নতুন নতুন পণ্য যাচ্ছে। গতকালও বেনাপোল দিয়ে আমার আড়াই লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ভারতে কিছু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড তাদের সেমি স্টোর স্থাপন করেছে। তারা তাদের পণ্য বাংলাদেশ থেকে নিচ্ছে। এছাড়া ভারতের জনসংখ্যাও অনেক বেশি। তারাও বাংলাদেশি পোশাকের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। এসব কারণ ভারতে আমাদের পোশাক রফতানি বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত অর্থবছরের প্রথমবারের মতো ভারতে পোশাক রফতানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সামনের দিনে এটি আরও বাড়বে বলে আমাদের প্রত্যাশা। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে কেবলমাত্র চীনেই আমাদের পোশাক রফতানি কমছে। জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া সব যায়গায় পোশাক রফতানি বাড়ছে। ভবিষ্যতে অপ্রচলিত বাজারও পোশাক রফতানির বড় গন্তব্য হয়ে উঠবে।’
এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে প্রত্যেকটি দেশই সংকটের মধ্যে রয়েছে। সেখানে করোনার পরপরই ভারত ও জাপানে পোশাকের রফতানি বৃদ্ধি পাওয়া খুবই ইতিবাচক। ভারত একটি বিশাল মার্কেট। জাপান বড় নয়, তবে হাই ব্রান্ডেড মার্কেট। সেই যায়গায় রফতানি বাড়াটা কিন্তু খুবই ইতিবাচক খবর। ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, সেখানে ক্রেতাদের বড় অংশটিই মধ্যভিত্ত। আর জাপানের মার্কেট খুবই উঁচু মানের। এই দুই দেশে রফতানি বৃদ্ধি খুবই বড় খবর। আশা করা যায় ভবিষ্যতে এই দুই দেশে রফতানি আরও বাড়বে।’
জাপানের বাজার নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জাপানের বাজার আমাদের জন্য খুবই সম্ভাবনাময়। জাপান খুবই রিচ (ধনী) মার্কেট। জাপানের সঙ্গে আমাদের কমিউনিকেশও ইজি। দেশটির ক্ষেত্রে আমাদের লিড টাইমও (উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ও দেশটি পণ্য পৌঁছে দেওয়ার সময়) কম লাগে। জাপানের সঙ্গে কাজ করার একটিই চ্যালেঞ্জ, তারা খুব সেনসেটিভ। হাই কোয়ালিফাইড না হলে পণ্য কিনবে না।’
তিনি বলেন, ‘জাপান আমাদের সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে চায়। বাংলাদেশ থেকে তারা অনেক সোর্সিং করছে। জাপানের সবচেয়ে বড় ব্র্যন্ড বা বায়ার ইউনিক্লো (UNIQLO) বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিয়ে থাকে। ভবিষ্যতে জাপানে ব্যবসা বাড়ার আরও বেশি সম্ভবনা রয়েছে।’
এদিকে ভারতের বাজার নিয়ে রুবেল আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে চীন ও ভারতের জনসংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। ফলে দেশ দুটিতে পোশাকের চাহিদাও বেশি। ফলে ভবিষ্যতে ভারতেও পোশাক রফতানি আরও বাড়বে। কারণ বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিলে ভারত সস্তায় নিতে পারবে। ভারতে মূলত টি-শার্ট ও জিনস ক্যাটাগরির পোশাক রফতানি হয়ে থাকে।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমও