Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঋণের বেড়াজালে বন্দি ৯২ শতাংশ জেলে: গবেষণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:০৫

ঢাকা: দেশের নদী ও সমুদ্র বন্দরে মৎস্য আহরণ বন্ধের সময় উপকূলীয় এলাকার ৯২ শতাংশ জেলেকে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। পাশাপাশি এসব এলাকার জেলে কার্ডের নামে বরাদ্দকৃত চাল সঠিক নিয়মে পান না বলে অভিযোগ করেছেন জেলেরা।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘জেলে কার্ড পাওয়া বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা ও কিছু সুপারিশ’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

সংগঠনটি বরগুনা ও কক্সবাজার জেলার দুইটি ইউনিয়নের ৮ হাজার ৬৪৪ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে বলে সেমিনারে জানিয়েছে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমজেএফের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শেখ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রোগাম ডিরেক্টর বনশ্রী মিত্র নিয়োগী। মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন কক্সবাজার ফিসিং ট্রলার অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান বাহাদুর এবং জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সমাজকল্যাণ সম্পাদক এসএম জাকীর হোসেন।

সেমিনারে লিখিত বক্তব্যে এমজেএফের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শেখ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রকল্পভূক্ত বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় ওই এলাকার সবচেয়ে বেশি মৎস্য শ্রমিক আছেন। সে হিসেবে এই জরিপটি পরিচালিত হয় পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন এবং মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে।

জরিপকৃত দুই ইউনিয়নে ২০২১ সালের মে মাসের ২০ তারিখ থেকে জুলাই মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় জরিপভুক্ত মৎস্য শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ৪৬ শতাংশ সরকারি বরাদ্দকৃত চাল পেয়েছিলেন। এ সময় পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের জেলে কার্ডধারী মৎস্য শ্রমিকদের ১৯ শতাংশ কোনো চাল বরাদ্দ পাননি।

৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারিভাবে দুই দফায় ৮৬ কেজি (প্রথম দফায় ৫৬ কেজি এবং দ্বিতীয় দফায় ৩০ কেজি) চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে পাওয়ার কথা। কিন্তু বরাদ্দকৃত অংশের চেয়েও অনেক কম চাল পেয়েছে জেলে পরিবারগুলো। এখানেও ১৯ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক সরকারি বরাদ্দের চাল পান, যাদের কোনো জেলে কার্ড নেই।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে ৭৯.৮ শতাংশ পরিবার একজন মাত্র উপার্জনকারীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল। মৎস্য শ্রমিক পরিবারগুলোর প্রায় সকলেরই (৯৯.২৭ শতাংশ) প্রধান পেশা মৎস্য আহরণ। সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় একটা বড় অংশের মৎস্য শ্রমিক (৪৫ শতাংশ) দিন মজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করেন। তবে ১৫ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক জানান, তারা সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো কাজ করেন না, বা করার মতো কোনো কাজ পান না।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, এই দুই ইউনিয়নে মোট জেলের মাত্র ৪২ শতাংশ জেলে কার্ডধারী। ২০২০ সালে জেলে কার্ড হালনাগাদের সময় জেলেরা সাগরে থাকায় প্রকৃত জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। স্বজন প্রীতির মাধ্যমে জেলে কার্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যক্তিগত শত্রুতা ও রাজনৈতিক বিবেচনায়ও অনেক প্রকৃত মৎস্য শ্রমিকরা তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়।

গবেষণায় আর দেখা যায়, সরকারের বরাদ্দকৃত চাল সঠিক পরিমাণে পান না, প্রদত্ত খাদ্য সহায়তা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তিন চতুর্থাংশ (৭৫%) মৎস্য শ্রমিক মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় আর্থিক সংকটে দিনযাপন করেন। পাথরঘাটায় ৬৬ শতাংশ এবং কুতুবজোমে ৮১ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক আর্থিক সংকটে পড়েন। আর্থিক সংকট মোকাবেলায় ৫২.৯ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক উচ্চ সুদে এবং ৩৯.২ শতাংশ বিনা সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হন। অর্থাৎ ৯২.১ শতাংশ মৎস্য শ্রমিকই ঋণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবেলা করতে বাধ্য হন। পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের ৭৯.১ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক উচ্চ সুদে এবং ১৮.১ শতাংশ বিনা সুদে ঋণ করতে বাধ্য হন। কুতুবজোমের ৪০ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক উচ্চ সুদে এবং ৪৯.২ শতাংশ বিনা সুদে ঋণ করতে বাধ্য হন। এছাড়া ৬.২ শতাংশ জমানো টাকা থেকে ব্যয় করেন।

জরিপ কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে ৩ হাজার ১৪১ পরিবার এবং কুতুবজোম ইউনিয়নে ৫ হাজার ৫০৩ পরিবারসহ সর্বমোট ৮ হাজার ৬৪৪টি পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর পাশাপাশি বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ এবং বিভিন্ন বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা লাভের জন্য পাথরঘাটা উপজেলা এবং মহেশখালী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এবং সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

সারাবাংলা/আরএফ/এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর