বছরে ৫০০০ কর্মী যাবে দ.কোরিয়ায়, জানতে হবে ভাষা
২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:২০
ঢাকা: তৈরি পোশাক খাতের পর জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে জনশক্তি রফতানি খাত। এই খাতের মাধ্যমে দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশের যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে, তেমনি আসছে বৈদেশিক মুদ্রাও। সরকারের হিসাবে গত ৪৬ বছরে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন। এর মধ্যে সরকারি জনশক্তি রফতানি সংস্থা বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড-বোয়েসেল’র মাধ্যমে ২৫ হাজারের বেশি কর্মী গেছেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। আর তারা সেখানে থেকে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১১১ মিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাষা দক্ষতায় দুর্বল থাকায় জনশক্তি রফতানির সম্ভাবনাময় বাজার দক্ষিণ কোরিয়ায় সেভাবে শ্রমবাজার প্রসারিত কার যায়নি। বর্তমানে দেশটিতে বছরে আড়াই হাজার কর্মী পাঠানো যাচ্ছে। তবে বোয়েসেল বলছে, এখন থেকে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করতে চায় তারা। অর্থ্যাৎ বোয়েসেল পাঁচ হাজার কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেক্ষেত্রে কোরিয়ান ভাষায় দক্ষতা থাকা বাধ্যতামূলক বলে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
বোয়েসেল সূত্রানুযায়ী, এক সময় দেশের চারটি কোম্পানির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠানো হতো। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে সে প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০০৭ সালে কম খরচে নিরাপদ অভিবাসনের লক্ষ্যে সরকারি সংস্থা বোয়েসেল এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট-এইচআরডি সমঝোতা স্মারকে সই করে। এর মাধ্যমে দেশটিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই নিয়োগগুলো হয় রিক্রুটমেন্ট পয়েন্ট সিস্টেমের (ইপিএস) মাধ্যমে।
কোরিয়ান ভাষা, কর্ম দক্ষতা, শারীরিক যোগ্যতা, বৃত্তিমূলক কাজের যোগ্যতা, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও চাকরির অভিজ্ঞতা— এসব বিষয় মূল্যায়ন করেই একেকজন আবেদনকারীর প্রাথমিক মূল্যায়ন হয়ে থাকে। শর্তানুযায়ী ৪ বছর ১০ মাসের জন্য উচ্চ বেতনে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানায় চাকুরির সুযোগ পান বাংলাদেশি কর্মীরা। তবে মেয়াদ শেষে দেশে ফিরতে হয় কর্মীদের।
বোয়েসেল বলছে, এই পদ্ধতিতে মালিকরা একদিকে যেমন কর্মী হারাচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি শ্রমিকদের অবৈধভাবে কোরিয়ায় অবস্থানের প্রবণতা বাড়ছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কোরিয়া সরকার ২০১২ সাল থেকে কর্মীদের রি-এন্ট্রির সুযোগ চালু করেছে। ফলে একজন কর্মী প্রথমবার যে সুযোগ পাচ্ছেন, মেয়াদ শেষে তিনি চাইলে আবারও সেই সুযোগ নিতে পারবেন। তবে সে সুযোগ তারাই পাবেন যে কর্মীরা কোরিয়ান ভাষা আয়ত্বের পাশাপাশি কর্ম দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছেন।
বোয়েসেলের তথ্য মতে, গত ১৪ বছরে ২৫ হাজারের বেশি কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বছরে এখন দুই থেকে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠানো হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারি কাটিয়ে ওঠার পর দেশটিতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের চাহিদা বাড়ছে। ফলে এ বছর বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার কর্মী নেওয়ার কথা জানিয়েছে। এসব কর্মীদের মাসিক বেতন হবে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে বছরে অন্তত ১৫ কোটি টাকা বেশি রেমিট্যান্স আসবে। তবে এই কর্মীদের হতে হবে ন্যূনতম এইচএসসি পাস আর জানতে হবে কোরিয়ান ভাষা। তাদের এই শর্তকে গুরুত্বে নিয়েছে বোয়েসেল।
এ প্রসঙ্গে বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের অবশ্যই দক্ষতা বাড়ানো উচিত। এক্ষেত্রে কোরিয়ান ভাষাগত দক্ষতা প্রয়োজন। যারা মোটামুটি দক্ষ তাদের একটি ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। আর যারা লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের রাখা হয়েছে আরেকটি ক্যাটাগরিতে। আমরা তাদের নিয়ে আলাদা করে বসব।’
সূত্র বলছে, বছরে এক লাখ কর্মী নিতে পারে দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পকারখানাগুলো। প্রত্যেক কর্মীর জন্য বোয়েসেলের এক লাখ টাকা জামানতসহ খরচ পড়বে দুই লাখ টাকা। দেশটির কর্মকর্তাদের বক্তব্য, কোরিয়ায় সবচেয়ে চাহিদা নেপালের কর্মীদের। কারণ তারা কোরিয়ান ভাষা দ্রুত আয়ত্ব করতে পারে। বাংলাদেশি কর্মীরা যদি ভাষা দক্ষতা বাড়িয়ে কোরিয়ান কোম্পানির মালিকদের সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলে আরও কয়েকগুণ বেশি কর্মী পাঠানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, আবেদন করা বাছাইকৃত কর্মীদের এবার আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেটি নিশ্চিত করতে দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছেন। এতে প্রতারণা বন্ধ হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি শ্রমিকদের সম্পূর্ণ সরকারিভাবে কম খরচে নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানো হয়। দুই সরকারের সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী বোয়েসেল ছাড়া অন্য কোনো এজেন্টের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সুযোগ নেই।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম