৪৩ কোটি টাকার প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয়ই ২৭ কোটি টাকা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:০২
ঢাকা: প্রকল্প ৪৩ কোটি টাকার। অথচ এই প্রকল্পের পাঁচ ধরনের পরামর্শকের পেছনেই ব্যয় হবে ২৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের অধিকাংশই যাচ্ছে পরামর্শক খাতে। তবে এসব পরামর্শকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আপত্তি তোলেনি পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে।— ‘বাংলাদেশের সকল পৌরসভার নাগরিক সেবাসমূহ ডিজিটাইজেশন এবং অটোমেশন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এসব পরামর্শক প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যতই অটোমেশন কাজ হোক। এত টাকার পরামর্শক লাগার কথা না। বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনের সেক্টর থেকে আরও ভালো করে দেখা উচিত ছিল। তবে অনুমোদনের আগে বিষয়টি ভালো করে দেখা হবে।’
সূত্র জানায়, প্রকল্পে মূল কার্যক্রমের অধিকাংশই পরামর্শকনির্ভর। যেমন ৪০৬ জন (জনমাস) কনসালটেন্সি ফর সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট পরামর্শক নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কনসালটেন্সি ফর সফটওয়্যার ওএন্ডএম নেওয়া হবে ২৪৬ জন (জনমাস), কনসালটেন্সি ফর ডাটা ট্রান্সফারের জন্য ৭৬০ জন (জনমাস), কনসালটেন্সি ফর ইমপ্লিমেন্টেশন টিম ৪৮ জন (জনমাস) এবং কনসালটেন্সি ফর ট্রেইনিং পরামর্শক নেওয়া হবে ১৩ হাজার ৩৫০ জন (জনমাস)। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পে পরামর্শক বাবদ মোট ২৭ কোটি ১০ লাখ টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। কিন্তু পরামর্শকদের বেতন কাঠামো, টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) ও যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়নি। পরামর্শকদের বিষয়ে বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় বা সংস্থার পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে।
পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এত টাকা খরচ করে কোন ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করা হবে কিংবা আইসিটি সেবা নেওয়া হবে, সেটি আগে জানা দরকার। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে সফটওয়্যার বাজার থেকে তৈরি অবস্থায় কিনলে সেটি বেশি লাভজনক হবে, নাকি পরামর্শক দিয়ে তৈরি করা সফটওয়্যার লাভজনক হবে— এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা দরকার। পরমর্শক সেবাগুলো বিস্তারিত জানতে পারলে ভালো হতো। তবে যাই হোক সরকারি টাকা যেন অপচয় না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য অনলাইনে সব সরকারি সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে মিল রেখে এলজিইডি পৌরসভার নাগরিক সোগুলো ই-সার্ভিসে রূপান্তর, ডিজিটাল পৌরসভা তৈরির জন্য আইসিটি অবকাঠামোর উন্নয়ন, পৌরসভার রাজস্ব আাদায় বৃদ্ধি করে বিভিন্ন কর, রেইট ফিস আদায় ব্যবস্থাপনা অটোমেশন, স্বচ্ছতা আনতে হিসাব ও পৌর বাজেট, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা অটোমেশন, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণসহ সব কার্যক্রম বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। সে জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে মোট ৪২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত হচ্ছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের অনুরূপ কোনো প্রকল্প এর আগে এলজিইডি বাস্তবায়ন করা হয়নি। কিন্তু এটুআই, আইসিটি ডিভিশন অথবা অন্য কোনো সংস্থার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বৈততা পরিহার করা যেতে পারে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব সফটওয়্যার ও অ্যাপস তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো অনেকটাই আইসিটি বিভাগের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলোকে কাস্টমাইজ করে পৌরসভায় ব্যবহার করলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
পরিকল্পনা কমিশন মতামত দিয়েছে যে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের লগফ্রেম সঠিকভাবে প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ডিপিপির অনুচ্ছেদ ১৪ দশমিক ৩ দারিদ্র্য পরিস্থিতি অংশে কীভাবে প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্রতা হ্রাস করা হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। প্রকল্পের আউটপুট পরিমাপযোগ্য হতে হবে। ডিপিপিতে সুনির্দিষ্ট আউটপুট উল্লেখ করা প্রয়োজন। সবধরনের সামগ্রী কেনার পরিমাণসহ তালিকা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এছাড়া জনমাস সঠিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন।
ডিপিপিতে মূলধন অংশে ৩২৯টি পৌরসভার আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার বাবদ ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ইনফ্রাস্টাকচার বাবদ বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি।
প্রকল্পে মূল কার্যক্রম মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ছয়টি ডাটা সেন্টারের সার্ভার, তিনটি ডাটা সেন্টারের লোড ব্যালেন্সার ও ব্যাকআপ সার্ভার, সাতটি ডাটা সেন্টারের উইন্ডোজ সফটওয়ার এবং ৩২৯টি পৌরসভার আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইত্যাদি।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম