ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪০
গাজীপুর: মহানগরীর টঙ্গীতে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।
নিহত গৃহবধূর নাম লাভলী আক্তার (২৩)। তিনি টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার ৩নং ব্লকের জাহাঙ্গীর মিয়ার মেয়ে। লাভলী একই এলাকার ৭নং ব্লকে স্বামী মিজানুর রহমান টিটুর সঙ্গে বসবাস করতেন। আর অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ডা. সালমা নাহার। তিনি টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।
পুলিশ জানা যায়, নিহত লাভলী টঙ্গী সরকারি কলেজের স্নাতকে শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। গর্ভাবস্থায় তিনি গত মঙ্গলবার তিনি স্নাতক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরে বৃহস্পতিবার সকালে লাভলী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনেরা টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে দুপুরে অস্ত্রপ্রচার করা হলে মেয়ে সন্তান জন্ম দেন লাভলী আক্তার। পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
লাভলীর বড় (খালাতো) বোন নাজমা আক্তার বলেন, ‘গত বুধবার দুপুর ১টায় হোসেন মার্কেট এলাকার ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে সন্তান প্রসব করানোর জন্য ভর্তি হয়। লাভলীকে অচেতন না করেই সিজার করিয়ে সন্তান প্রসব করানো হয়। কিছুক্ষণ পর অপারেশন থিয়েটার থেকে অনেক চিৎকারের শব্দ আসতে থাকে। এসময় অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন ডাক্তার এসে তার স্বামী টিটুর কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেয় এবং বলে আপনাদের রোগী ভালো আছে। পরে ওইদিন বিকেলের দিকে রোগীর অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেলে রাতেই ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যায় তার স্বামী।’
ভুল চিকিৎসায় লাভলী আক্তারের মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদ ছড়িয়ে গেলে লাভলীর স্বজন ও এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই হাসপাতালের সামনে ভিড় জমিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে অবরোধ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিচার দাবি করেন।
লাভলীর স্বামী মিজানুর রহমান টিটু বলেন, ‘ধানমনন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তাররা বলেন— কোনো সিজারের রোগী এভাবে লাফানোর কথা না। যে চিকিৎসা করেছে সেই জানে কি করেছে রোগীকে। পরে লাভলীকে বিকেলে সাড়ে ৩টায় পুনরায় টঙ্গীর ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করি। এরপর বিকাল চারটার দিকে লাভলীর মৃত্যু হয়।’
ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. হাসমত আলী বলেন, ‘যিনি লাভলীর অপারেশন করেছেন তিনি খুব ভালো ডাক্তার। এ পর্যন্ত তিনি অনেক রোগীর সিজার করেছেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সিজারের পর প্রায় রোগীরই খিঁচুনি শুরু হয়।’
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থানে চলে আসছি। রোগী ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ৫ম তালায় আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিল। বিকাল চারটায় লাভলী আক্তারের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/এনএস