আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা হলে প্রতিরোধ গড়বে ১৪ দল
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:২৭
ঢাকা: আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধন ও দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা হলে তা শক্তভাবে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করবে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। রাজধানীতে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এক আলোচনা সভায় এই অবস্থান প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু।
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আমরা দেশে কোনো নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা চাই না। কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করলে আমরা ঘরে বসে থাকব না। জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি করে যারা নৈরাজ্যকর আন্দোলন করার চেষ্টা করবে তাদেরকে অবশ্যই প্রতিহত ও প্রতিরোধ করব। তাদের সমস্ত নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সময় শেষ। আগামী দিন থেকে প্রতিহত করার জন্য ১৪ দল প্রস্তুত, এটি পরিষ্কার বলে দিতে চাই।’
রাজধানীর কাকরাইলে ইন্সটিটিউট অবি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ১৪ দল এই সভার আয়োজন করে।
বিএনপির জন্মসৃষ্টিসহ জিয়াউর রহমানের আমলের সমালোচনা করে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘যাদের জন্মই হয়েছিল পাকিস্তানের প্রেমে,পাকিস্তানের সঙ্গে লুস কনফেডারেশন করার লক্ষ্যে। বিএনপি একটি ষড়যন্ত্রমূলক দল; তাদের কাছ থেকে এই প্রমাণ আমরা বারবার পেয়েছি। সেই পথ অনুসরণ করেই খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন, সরকার গঠন করেছিল। আজকে হঠাৎ করে থলের বিড়াল আবার বেরিয়ে গেল। মির্জা ফখরুলের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো পাকিস্তানের জয়গান।’
বিএনপির আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি মূল লক্ষ্য নির্বাচন নয়, দাবি করে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই দেশে অরাজনৈতিক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আবার কোনোরকম ক্ষমতায় অদল বদল করা। ওই পথে যাওয়া যায় কি না তারই একটি হিসাব-নিকাশ তারা করছে। কিন্তু সেই হিসাবে অনেক গরমিল। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার জল এরইমধ্যে অনেক গড়িয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশের মানুষের মনমানসিকতায় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধকে যারা মেনে নিতে পারেনি সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারাই তথাকথিত রাজনৈতিক দল গঠন করে এই দেশে বারবার নৈরাজ্য সৃষ্টি করে অরাজনৈতিক সরকার গঠনের পাঁয়তারা করেছে বলেও দাবি করেন আমু।
তিনি বলেন, ‘আজকে যদি তারা মনে করে থাকেন, তারা একইভাবে এগুতে পারবেন; তাহলে তারা ভুল করছেন। মস্তবড় ভুল করছেন। তারা ফাইনাল খেলতে চায় কিন্তু ফাইনাল খেলার আগে যে মিড খেলা; সেই মিড খেলা খেলতে খেলতে তাদের পা ভেঙে যাবে। এটি তারা বুঝতে পারে না।’
‘মিড খেলা খেলতে খেলতেই পা ভেঙে যাবে ফাইনাল খেলতে আসতে হবে না কষ্ট করে। ওই ফাইনাল হবেও না, আপনাদের কষ্টও করে আসতে হবে না। কারণ আপনারা ফাইনাল খেলার প্লেয়ার না, প্রমাণ করেছেন। বিগত দুই তিনটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন আপনারা নির্বাচনকে ভয় পান। আপনারা জনগণকে ভয় পান। জনগণ আপনাদের ভোট দেবে না; এটা আপনারা জানেন।’
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘আপনারা জনগণ দ্বারা ধিকৃত। আপনারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত। বিএনপির কেউ বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কেউ বলে নির্বাচনকালীন সরকার। কেউ বলে জাতীয় সরকার; যার যা বিশ্বাস তাই-ই বলে। আরেকটা সময় বলবে আমাদের সরকার ছাড়া আমরা নির্বাচন করব না। কিন্তু আমরা তো জানি তাদের সরকার আমলে নির্বাচন কী রকম হয়?’
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার আমলে অনুষ্ঠিত কারচুপির নির্বাচনের সমালোচনা করে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আজকে তারা যে বড় বড় কথা একটা কথা আছে
না; চোরের মায়ের বড় গলা। তাদের চেষ্টা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো, চোরের মায়ের বড় গলার মতো।’
আমু বলেন, কিন্তু আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা নৈরাজ্য চাই না। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না। কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করলে আমরা ঘরে বসে থাকব না। আমরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিহত করবে, জনগণের সহায় সম্পত্তি ক্ষতি হতে দেব না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতি হতে দেব না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতি করে, জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি করে যারা নৈরাজ্যকর আন্দোলন করার চেষ্টা করবে তাদেরকে অবশ্যই প্রতিহত করবো এবং প্রতিরোধ করবো। এটি আমি পরিষ্কার বলে দিতে চাই।’
গণতান্ত্রিক পন্থায় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আন্দোলনে ছিলাম এবং আন্দোলনে থাকব জানিয়ে আমু বলেন, ‘এই অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সুস্থ আন্দোলন পরিচালিত হবে। প্রয়োজনবোধে যখন যেখানে যেভাবে দরকার। আমাদের নেত্রী মাননীয় নেত্রী বারবার তাদেরকে কাজ করবার সুযোগ দেওয়ার কথা বলে যাচ্ছেন। বারবার তিনি বলছেন, বাধা দেবেন না। বারবার তিনি বলছেন, আন্দোলন করতে দেন। কিন্তু তারা তো বাধা চায়। তারা পুলিশের গাড়িতে পেট্রোল বোমা মারে। পুলিশের গাড়িতে ইট মারে। পুলিশের ওপর হামলা করে। যেন তারা বলতে পারে, আমাদের আন্দোলনে পুলিশ হামলা করেছে। তাদের এই সমস্ত নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সময় শেষ।’
আমরা সজাগ সচেতেন এবং আগামী দিন থেকে প্রতিহত করার জন্য ১৪ দল প্রস্তুত বলেও দাবি করেন ১৪ দলের মুখপাত্র আমু।
ভুতের পা পেছন দিকে হাঁটে প্রবাদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা দেখলাম বেশ কিছুদিন ধরে বেশ গরম গরম কথার মধ্য দিয়ে আসল সত্যটা বেরিয়ে আসছে। সেই সত্য তারা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে তা হল বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতি নাকি পাকিস্তান আমলের চাইতেও খারাপ। পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার যে বাহানা যারা বিএনপির করেছে এই বাহানাকে খুব সরলভাবে সোজাভাবে নেওয়ার প্রশ্ন আসে না। কারণ তারা মনে করছে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। মানুষ বিক্ষুব্ধ। তারা মনে করছে জ্বালানির দাম বেড়েছে মানুষ বিক্ষুব্ধ। তারা বিক্ষোভ করে রাস্তায় নামবে।’
আর তাই সেই কথাগুলো নিয়ে মাঠে নেমে মাঠ দখল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই মাঠ দখল করতে গিয়ে আসল সত্যটাকে বের করে দিয়েছে বলেও মনে করেন রাশেদ খান মেনন।
বিগত সময়ে বিএনপির নির্বাচন বর্জন সংস্কৃতির সমালোচনা করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আজকেও আবার সেই খেলায় তারা মেতে উঠেছে। তারা বলছেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। আমরা বারবার বলেছি, এখনও বলছি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই দিন শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং আপনারা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, যদি নির্বাচনে বিশ্বাস করেন, তাহলে পরে আসুন সেই নির্বাচনের মাঠে শক্তি পরীক্ষা হোক। মানুষ ভোট দেবে উন্নয়নের পক্ষে, মানুষ ভোট দেবে অগ্রগতির পথে। মানুষ ভোট দেবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে। পাকিস্তানের ফিরে যাওয়ার জন্য মানুষ ভোট দেবে না। তাই এই ভীতি থেকে তারা নির্বাচনে আসতে রাজি নয়। ষড়যন্ত্রের জাল তারা পাকাচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এগিয়ে যেতে হবে।’
১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কামরুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জেপির শেখ শহিদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ অনেকে।
সারাবাংলা/এনআর/একে