Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তার মুখে এটি মানায় না— প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৫৩

ঢাকা: জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ‘বিশ্বে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না’— এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তার মুখে এটি মানায় না’।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বড় বড় কথা বলছেন বিদেশে গিয়ে। মার্কিনদের ওখানে গিয়ে বলছেন, যে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কেউ চায় না যুদ্ধ পৃথিবীতে, কেউ চায় না নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) মুখে এটি মানায় না। তিনি নিজে হত্যার সঙ্গে জড়িত। তার সরকার এই হত্যাগুলো করছে। গুম হয়ে গেছে ৬‘শ ওপরে মানুষ- ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শত শত মানুষকে তারা থানায় নিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে, সহস্রাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। এ কারণে এলিট ফোর্স র‌্যাব- যারা দেশে সুনাম কুড়িয়েছিল অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে, এ সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা পড়তে হয়েছে, ৭ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে। এটি নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই।’]

‘তারাই (সরকার) নির্দেশদাতা। তাদের বিরুদ্ধে সবার আগে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। নিষেধাজ্ঞা এরইমধ্যে জনগণ দিয়ে দিয়েছে। মানুষ বলে দিয়েছে যে, তোমাদেরকে আর দরকার নাই। বহু হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ’- বলেন মির্জা ফখরুল।

শাওনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন, এই সংগ্রাম, এই আত্মদান, এই রক্তপাত বিএনপির জন্য নয়, এটি পুরো জাতির জন্য। আজকে সমস্ত জাতি একটা মহাসংকটে পড়েছে। আজকে ওরা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে যে, পত্র-পত্রিকাগুলো কেউ সাহস করে সত্য কথাটা বলতে পারে না- এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে। কতগুলো পত্রিকায় বলেছে যে, শহীদুল ইসলাম শাওনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আওয়ামীপন্থী মিডিয়া বলছে যে, তাকে পেছন থেকে ইট মারাতে সে মারা গেছে।’

‘অথচ শাওনের ডেথ সার্টিফিকেটে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, মেসিভ ব্রেইন ইনজুরি ডিউ টু গান শট। ছবিটা আমি দেখাব না। এখানে শিশুরা আছে। আমার কাছে সেই ছবিও আছে। মাথার খুলি পর্যন্ত উড়ে গেছে। এই দেশে, এই রাষ্ট্রে যারা গণতন্ত্রের কথা বলে আমাদের সেই সমস্ত ভয়াবহ গণতন্ত্র হরণকারীরা তখন লজ্জ্বায় ধিক্কার দেওয়া ছাড়া আর কিছু আসে না’- বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করছি জনগণের সমস্যা নিয়ে। এই আন্দোলনে এরইমধ্যে আমাদের চারজন তরুণ-যুবক প্রাণ দিয়েছে। আট মাসের একটা বাচ্চা, স্ত্রী, বাবা-মা’কে বাঁচিয়ে রাখতে, তাদের জীবন-ধারণের জন্য শহীদুল ইসলাম শাওন অটোরিকশা চালাত। দলের কর্মসূচিতে সবার সঙ্গে গিয়ে সে যখন প্রতিবাদ করছিল সেই সময় সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে ইনজুরড হয়। তারপর সে হাসপাতালে মারা যায়। এজন্য আজকে আমরা সবাই ভারাক্রান্ত।’

মুক্তিযুদ্ধকে সরকার পুরোপুরি বিকৃত করছে অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পুরোপুরিভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। শুধু আংশিক নয়, পুরোপুরিভাবে ভিন্ন নেরেটিভ, ভিন্ন ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিল একদিনে নয়, দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম হয়েছে তাদের স্বাধীনতার জন্যে, তাদের স্বাধিকারের জন্য। সেই সংগ্রামে আমাদের অনেক ত্যাগী নেতার অবদান আছে, আত্মত্যাগ আছে। ওই দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের কথা কোথাও উল্লেখ করা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘উদ্দেশ্য একটাই যে, জাতিকে সত্যিকার অর্থে প্রকৃত ইতিহাস জানানো। আজকে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে, পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটা যে এখানে বক্তব্য রাখলো সে জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ করল। অর্থাৎ ওই শিশুর উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান কিন্তু বেঁচে গেলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে।’

তিনি বলেন, ‘এরা (সরকার) আহম্মকের স্বর্গে বাস করে। এরা মনে করে যে, তারা কথা বললেই, মিথ্যা প্রচার করলেই ইতিহাস সেটি নিয়ে নেবে। ইতিহাস তো নেয় না, ইতিহাস যেটা সত্য তাই নেয়। ইতিহাসকে কেউ ইচ্ছা করলেই বিকৃত করতে পারে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনীতি শুরু করেছিলেন ফুল দিয়ে। সজীব ওয়াজেদ জয় (প্রধানমন্ত্রীর পুত্র) যখন দেশে এসেছিলেন তখন তার কাছে ফুল উপহার পাঠিয়েছিলেন। অর্থাৎ গণতন্ত্রের যে সহনশীলতা তার দৃষ্টান্ত তিনি শুরু করেছিলেন।’

রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, রচনা প্রতিযোগিতায় শিশু শাখার বিজয়ী সাজিদ জাহিদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সোহরাব উদ্দিন, শামসুজ্জোহা মেহেদি, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/একে

টপ নিউজ বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর