গতি নেই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ’ প্রকল্পে
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৫৬
ঢাকা: গতি নেই শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ প্রকল্পে। চার বছরে প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১৮.০৩ শতাংশ। এছাড়া আর্থিক অগ্রগতি ১২.৫৫ শতাংশ। ২০ হাজার সমাধিস্থলের মধ্যে এখন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৬০৫টির।
‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পে বিরাজ করছে এ অবস্থা। গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমিন্টেশন কমিটি) সভা। ওই সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পিআইসি সভা থেকে জানা গেছে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ৪৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সাল হতে ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব গত ৭ মার্চ অনুমোদন দেয় পরিকল্পনা কমিশন। এর আগে মূল প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মূল প্রকল্পে ব্যয় ছিল ৪৬০ কোটি ৯৭ ৯৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে মোট ২০ হাজারটি সমাধিস্থল নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা হবে। সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী কম-বেশি ৫ হাজারটি সমাধি গণপূর্ত অধিদফতরের মাধ্যমে উন্নয়ন করা হবে এবং অবশিষ্টগুলো উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৯০টি সমাধিস্থলের টেন্ডার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬০৫টি সমাধির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৫ হাজার ৫৯১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১২.৫৫ শতাংশ।
সভায় বলা হয়, সমাধির তালিকা সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং দু’টি উপজেলা তেড়খাদা, কুষ্টিয়া ও সন্দ্বীপ, ভোলা থেকে তালিকা পাওয়া গেছে। পরীক্ষা করে সেগুলো প্রকল্প পরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হবে। তবে মাঠপর্যায় থেকে দ্রুত তালিকা প্রাপ্তির জন্য প্রকল্প পরিচালককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভায় বলা হয়, এ পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতি খুবই কম। এ বিষয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দ্রুত কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়। সভায় এডিপি বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রয় পরিকল্পনা এবং কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী যথাযথ ড্রইং, ডিজাইনের জন্য মানসম্মত কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভায় আরও বলা হয়, প্রকল্পে জনবল না নেওয়ার ফলে কাজের বিঘ্ন হচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে আরডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী লোকবল বিশেষ করে কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক নিয়োগ করা প্রয়োজন। জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলাকালীন অতিরিক্ত দায়িত্বে প্রকল্পের কাজ করানো যায়।
প্রকল্প পরিচালককে মাঠপর্যায়ে সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়। সভায় নেমপ্লেটে আপাতত অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী স্থাপন করার এবং স্থায়ী করার জন্য অমোচনীয় কালি বা লেজার প্রযুক্তি দিয়ে সমাধিতে নাম লেখার বিষয়ে আলোচনা হয়। আগামী পিএসসি সভায় জুমে মাঠ পর্যায়ে অবস্থা জানার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সংযুক্ত রাখার বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়।
পিআইসি সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানা গেছে, প্রকল্প পরিচালক মাঠ পর্যায়ের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবেন। প্রকল্পে অফিস সহায়ক ও কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের জন্য প্রকল্প পরিচালক দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। ডিপিডি ও এপিডি নির্বাচনের জন্য প্রকল্প পরিচালক মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠাবেন। আগামী পিএসসি সভায় মাঠ পর্যায়ের অবস্থা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের জুমে সংযুক্ত রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী আপাতত নেমপ্লেট স্থাপন এবং সমাধির নাম ফলকটি স্থায়ী করার জন্য অমোচনীয় কালি বা লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও প্রকল্প পরিচালক ফয়সাল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি সম্প্রতি অন্য জায়গায় চলে গেছি। আমি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না। নতুন যিনি আসবেন তার সঙ্গে কথা বলেন।’
সারাবাংলা/জেজে/এমও