বদলে গেছে চোখ ওঠার ধরন, বাড়ছে সংক্রমণ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:৫৫
ঢাকা: রাজধানীসহ গোটা দেশেই বাড়ছে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসকরা বলছেন, চোখ ওঠার ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। আগে চোখ উঠলে চোখে পিঁচুটি ও মেমব্রেন দেখা দিতো। এবার চোখে ব্যথা, ফোলা ও পানি আসার সমস্যা দেখে দিচ্ছে। তবে কেন এই আউটব্রেক বা প্রকোপ বৃদ্ধি তা নিয়ে কোনো ধারণা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে অফিসে এসে প্রচণ্ড চোখ ব্যথা নিয়ে বাসায় ফিরে যান নূর সুমন (২৮)। তার চোখ অস্বাভাবিকভাবে লালও হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে চোখে ড্রপ দিয়ে ও কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে সুস্থ হন সুমন।
রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার শামসুন্নার মলি জানান, সপ্তাহখানেক আগে তার অফিসের গাড়িচালকেরও (৫০) একই সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া তার বাসায় কাজ করেন যে নারী তিনি ও তার পরিবারের সবারও চোখ ওঠার সমস্যা দেখা দেয়। মলি তার শিশু সন্তানদের কথা চিন্তা করে কাজের লোককে এক সপ্তাহের ছুটি দিয়ে দেন। এভাবে রাজধানীর অনেক অভিভাবকই চোখ ওঠা বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসেন সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রায় মাসখানেক ধরে চেম্বারে আসা রোগীদের শতকরা পঁচিশ শতাংশই আসছেন চোখ ওঠার সমস্যা নিয়ে। বিশ বছরের অভিজ্ঞতায় চোখ ওঠা নিয়ে এত রোগী দেখিনি। এবার শুধু চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যাই বাড়েনি, চোখ ওঠার ধরনে এসেছে পরিবর্তন। এবার তিন ধরনের রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ চোখ ওঠা, ব্যথাযুক্ত ও ফোলার পাশাপাশি পানি আসা।’
অন্যান্য বছরের তুলনায় আর কী পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন জানতে চাইলে এই চক্ষু বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অন্যান্যবার চোখ উঠলে চোখে একটি পাতলা পর্দা বা মেমব্রেন পড়তে দেখা যায়। এবার সেটি দেখতে পাচ্ছি না।’ সব বয়সী রোগী পেলেও শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ কিছুটা বেশি দেখা যাচ্ছে বলেন এই চিকিৎসক।
বাংলাদেশ আই হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. মেহেবুব কাদির বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরেই চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তার কাছে আসা বিভিন্ন বয়সী রোগীদের শতকরা বিশ শতাংশই আসছেন চোখ ওঠা নিয়ে।’
শিশু বিভাগের চিকিৎসক লুনা পারভীন জানান, তার চেম্বারে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি শিশু আসছে চোখ ওঠার সমস্যা নিয়ে। অধিকাংশ শিশুরই চোখ লাল, ব্যথা ও ফোলা। পিঁচুটি ও মেমব্রেনের সমস্যা তেমন নেই।’
আরেকজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জালাল হোসাইন তার কর্মস্থল কুমিল্লার মেঘনার পাশাপাশি সপ্তাহে এক বা দুইদিন কুমিল্লার হোমনা ও ঢাকায় রোগী দেখেন। তিনিও কয়েক সপ্তাহ ধরে চোখ ওঠার রোগী বেশি পাচ্ছেন বলে জানালেন। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়জন করে চোখ লাল, ব্যাথা ও ফোলাযুক্ত রোগী পাচ্ছেন।
হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়া চোখ ওঠার প্রকোপ বাড়ার কারণ সম্পর্কে অবশ্য কোনো কিছু বলতে পারেননি এই চিকিৎসকরা। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খুরশীদ আলমকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারও চোখ উঠে থাকতে তা স্কুলে না পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক নোটিসে এ অনুরোধ জানানো হয়।
চিকিৎসা ও সতর্কতা
চোখ ওঠার ধরনে পরিবর্তন হলেও তেমন কোনো বাড়তি জটিলতা নেই বলে জানালেন চিকিৎসকরা। বাজার চলতি ওষুধেই কাজ হচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম, ড্রপ বা ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। এটি সারতে সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় নেয়। তাই এ সময় রোগীদের বিশ্রামের পাশাপাশি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান করেছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
চোখ উঠলে রোগীকে যথাসম্ভব আলাদা রাখতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে স্কুলে পাঠানো যাবে না। তারা যেন অপরিষ্কার হাত বা অন্য কিছু দিয়ে চোখে স্পর্শ না করে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। চোখে যেন ধুলাবালি না লাগে সেটি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়াও এক চোখ উঠলে আরেক চোখ সংক্রমিক হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই চোখ পরিষ্কার করা হাত সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে ফেলতে হবে। অন্য চোখ বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে স্পর্শ করা যাবে না। যে তোয়ালে বা রুমাল দিয়ে আক্রান্ত চোখ মোছা হচ্ছে সেটিও অন্য চোখে স্পর্শ করা যাবে না, বা অন্য কেউ সেটি ধরা যাবে না। শিশুদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের চোখ পরিষ্কার বা ড্রপ দেওয়ার পর হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। এদিকে অনেকেই মনে করেন চোখ উঠলে সানগ্লাস পরলে এটি সংক্রমণ থামাতে সাহায্য করে।’
ডা. ইসমাইল বলেন, ‘সানগ্লাস সংক্রমণ কমাতে বা থামাতে কোনো ভূমিকা রাখে না। তবে তা রোদ ও ধুলোবালি থেকে চোখকে রক্ষা করে।’
সারাবাংলা/আরএফ/একে