বুড়িগঙ্গার পর ট্যানারির দূষণ ধলেশ্বরীতে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:২৩
ঢাকা: রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলো থেকে ফেলা বর্জ্যের মাধ্যমে দূষিত বুড়িগঙ্গা নদীকে বাঁচাতে এগুলো সাভারের হেমায়েতপুর সরানো হয়। এতে করে বুড়িগঙ্গা কিছুটা রক্ষা পেলেও দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী। মূলত হস্তান্তরিত ট্যানারি কারখানাগুলোর বর্জ্যের ধলেশ্বরীতে পড়ার কারণে ঘটছে এ দূষণ।
নদী দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে হাজারীবাগে বন্ধ করা হয়েছিল ট্যানারি কারখানাগুলো। এখন ট্যানারি কারখানাগুলো দূষিত করছে ধলেশ্বরী নদীকে। অন্যদিকে হাজারীবাগ থেকে এখনো পুরোপুরি ট্যানারি বন্ধ হয়নি।’
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড বিফর্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি), বালাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও পানি অধিকার ফোরাম আয়োজিত এ আলোচনা সভায় পাথর ও বালু উত্তোলন নদ-নদীর ক্ষতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিষয় তুলে ধরেন বক্তারা।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, ঢাকার চারপাশে নদী ট্যানারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনৈতিক কারণে বলা হয় চামড়ার ব্যবসা করে অনেক মানুষ ধনী হয়েছে। অথচ অর্থনৈতিক বিবেচনায় কত ক্ষতি হয়েছে সেটা পরিমাপ করা হয়নি।
এছাড়াও বালু উত্তলনের মাধ্যমে কীভাবে নদী ধ্বংস হচ্ছে সেটিও তুলে ধরেন বক্তারা। বেলা প্রধান বলেন, বালু মহল থেকে গত ৪ বছরে আয় ২৫৬ কোটি টাকা। ৬টি নদী ধ্বংস হয়েছে অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের জন্যে। কি পরিমাণ বালু উত্তোলন প্রয়োজন, সে অনুযায়ী উত্তোলন করা হচ্ছে কি না- সেটা তদারকি করার কেউ নেই। এছাড়া প্রতিবছর জাফলংয়ে পাথর উত্তোলনের নামে প্রতিবছর সরকার রাজস্ব পায় ৬ কোটি টাকা।
সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে। জাদুকাটা নদীর বিষয়ে দফায় দফায় আদালতে গিয়েছি। পদ্মা-মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম। স্থানীয় পর্যায়েও আন্দোলন হচ্ছে এগুলো নিয়ে- বেলা প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বালু তুলতে হলে বালুমহল আইন-২০১০ চালু থাকলেও কর্যকর নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিসির নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে। সেই কমিটি বালু উত্তোলনে শব্দদূষণ, নদীভাঙন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলে ওটা বন্ধ করে দেবে। অথচ সেই কমিটি পরিদর্শনেই যায় না।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, নদী সংরক্ষণের নামে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছিলেন সেলিম খান। অথচ নিজের স্বার্থে সেটা ব্যবহার করেছেন। উচ্চ আদালত বালু উত্তোলনের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন।
এদিকে নদী থেকে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়ে বেশি বলে দাবি করেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘পাথর উত্তোলনে মারা গিয়েছে ১০২ জন, সরকারি হিসাবে যদিও ৮১ জন।’
হাইকোর্টের রায়কে অভিনন্দন জানিয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী বলেন, নদীর ক্ষতি হলে সরকার অভিভাবক হিসেবে দায়ী। হাইকোর্ট কর্মপরিকল্পনা চেয়েছে অথচ সরকার কর্মপরিকল্পনা দেয়নি করোনার অজুহাতে। কিন্তু বালুমহল চালানোর অনুমতি ঠিকই দিচ্ছে।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ইটিপি চালু করার কথা। এজন্য সরকার-বেসরকারি কমিটিকে সুতার নদী নিয়ে ২ মাস পরপর প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে পরিবেশ বিভাগ ১-২ টি প্রতিষ্ঠান বাদে সব প্রতিষ্ঠান ঠিকঠাক ইটিপি চলছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্তিতি ছিলেন এলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ, রাজশাহী রুলফাও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন।
সারাবাংলা/আরএফ/এনএস