Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভূমি জরিপ শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে লাগবে ৭ বছর, বাড়ছে ব্যয়

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:০৯

ঢাকা: গতি নেই বাংলাদেশ ভূমি জরিপ প্রকল্পে। ফলে তিন বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে যাবে ৭ বছর। গত তিন বছরের প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা মূল অনুমোদিত ব্যয়ের ১৫.৭৬ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে।

‘বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ করছে এই চিত্র। প্রকল্পের প্রথম সংশোধন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর। এই প্রস্তাবের ওপর গত ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। ওই সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি এখনও আমার হাতে আসেনি। প্রকল্পটির গভীরে গিয়ে ধীর গতির কারণ খুঁজে দেখা উচিত। শুধু ভাসা ভাসা ভাবে দেখে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া ঠিক নয়। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের বলবো, তারা যেন বিষয়গুলো ভালো করে দেখে।’

কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি জানার পর, তিনি হাতে সময় নেই বলে ফোন কেটে দিয়েছেন।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়, আধুনিক বিশ্বে ভূমি ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ভূমি ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। কিন্তু ভূমি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তিসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন থাকলেও ভূমি জরিপ শিক্ষায় এসব প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও এ বিষয়ে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বর্তমান ও ভবিষ্যত চাহিদার জন্য ভূমি ও অন্য জরিপ শিক্ষায় দক্ষ জনবল তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ ‘বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে হাতে নেয়। এটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

এছাড়া ২০১৮ সালের জুলাই থেকে গত বছরের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। এরপর আইএমইডি সুপারিশে কারিগরি ও  মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় প্রথমবার প্রকল্পটির আন্তঃখাত ব্যয় সমন্বয় করা হয়।

এ পর্যায়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পে কিছু নতুন টেকনোলজি অন্তর্ভুক্তি, পিডব্লিউডির রেট সিডিউল পরিবর্তন, কিছু অঙ্গের ব্যয় হ্রাস বা বৃদ্ধি এবং কোভিড-১৯ মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিম্ন অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় অবশিষ্ট কার্যক্রম শেষ করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় মোট ৩৬০ কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

এছাড়া ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২৫ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। গত জুনে প্রস্তাবটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রকল্পটির গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতিসহ বাস্তব অগ্রগতির হালনাগাদ চিত্র উপস্থাপন করা হয়। কিছু খাতে অনুমোদন বহিভূর্ত ব্যয়, নির্মানাধীন কয়েকটি ভবনের জন্য অনুমোদিত প্রকল্পের অতিরিক্ত অর্থের চাহিদা, কয়েকটি নতুন অঙ্গের প্রস্তাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। তাই আলোচনা শেষে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পাশাপাশি নতুন অঙ্গগুলোর প্রয়োজনীয়তাসহ সকল অঙ্গের পরিমাণ বা সংখ্যা ও ব্যয় বৃদ্ধির পুনরায় যাচাই করে প্রতিবেদন প্রণয়ন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর জন্য আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সমন্বয় একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ৪ জুলাই পুনরায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কিছু সিদ্ধন্তের পাশাপাশি এই প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত নতুন এবং যে সব অঙ্গের কার্যাদেশ এখনও দেওয়া হয়নি সে সব নির্মাণ ও পূর্তকাজ পিডব্লিউডির রেট সিডিউল ২০২২ অনুযায়ী শেষ করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি পুনর্গঠিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রাপ্তি সাপেক্ষ পুনরায় পিইসি সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সে জন্য প্রকল্পটির নির্মাণ ও পূর্তকাজের ব্যয় প্রাক্কলন রেট সিডিউল ২০২২ অনুযায়ী নির্ধারণ করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৮০ কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা যা মূল অনুমোদিত ব্যয় অপেক্ষা ১০১ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার (৩৬.৩৯ শতাংশ) টাকা বেশি।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, পিডব্লিউডির রেট সিডিউল পরিবর্তন, নির্মাণ ও পূর্তকাজের জন্য পিডব্লিউডির রেট সিডিউল ২০১৪ ও ২০১৮ এর পরিবর্তে রেট সিডিউল ২০২২ এর অন্তর্ভুক্তির কারণে সংশোধন করতে হচ্ছে। অনুমোদিত ৪টি টেকনোলজির পরিবর্তে নতুন করে ৫টি যুগোপযোগী টেকনোলজি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রকল্প সংশোধনী প্রস্তাবে।

এছাড়াও বেশকিছু নতুন বিষয় এতে যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, মাল্টিপারপাস ভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ডরমেটরি, ছাত্রীনিবাস, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, বাউন্ডারি ওয়াল, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, স্টাফ কোয়ার্টার ইত্যাদি খাতে ব্যয় বেড়েছে।

তবে ভূমি অধিগ্রণ বা ক্রয়, ভূমি উন্নয়ন, ওয়ার্কশপ ভবন, অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়ন, পরামর্শক ব্যয় (ইইডি), ওভারহেড ট্যাংক, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে।

মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বলায়, প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম বিলম্বে শুরু হওয়ায় এবং কোভিড-১৯ মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তাই কর্যক্রম শেষ করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

সারবাংলা/জেজে/এমও

বাড়ছে ব্যয় ভূমি জরিপ ভূমি জরিপ প্রকল্প


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর