দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজারের অলিগোপলি ভাঙতে হবে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:৪২
ঢাকা: দেশের বাজার ব্যবস্থা মনিটরিংয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান বাজারে অলিগোপলি কায়েম করেছে। তারা ক্রমেই একচেটিয়া হয়ে উঠছে। এই সিন্ডিকেটকে প্রচ্ছন্ন সহায়তা দিচ্ছে সরকার। এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে চাল, ডিম ও নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ নামের একটি সংগঠন এই আলোচনার আয়োজন করে।
সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সম্বন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খান, বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার, ভোক্তা কন্ঠের সম্পাদক আব্দুল হান্নান, জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. সিরাজুজ্জামান ও সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন।
অনুষ্ঠানে সাইফুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের ভোক্তা অধিকার নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায় না। আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নিজের সুবিধায় নিয়ে গেছে। দেশে এমন পরিস্থিতি যে, যদি ৩০ মিনিট বৃষ্টি হয় তাহলে এর কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি হয়। খাদ্য মজুতের পরিমাণ যে কম তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেই ব্যবসায়ীদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়। তার মানে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা এই সিণ্ডিকেট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তা প্রমাণিত।’
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কতিপয় প্রতিষ্ঠান মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্যবসায়ীরা মুনাফা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অন্যতম দায়িত্ব। ভোটাধিকারের যেমন জবাবদিহিতা নেই, তেমনিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণেও সরকারের মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলির জবাবদিহিতা নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার নিজেই এই সিন্ডিকেটকারীদের পৃষ্ঠপোষক। রাষ্ট্র যতক্ষণ না পর্যন্ত বাজারে নিজের সক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বাজারের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’
অটো রাইস মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘অসৎ ব্যবসায়ীরা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রশীদ গং বাজারে কারসাজি করেছে। খাদ্যমন্ত্রী যখন মন্ত্রণালয়ে রশিদ বিল্লালকে ডেকে বলেন চালের দাম বাড়ল কেন? তখন তারা উত্তরে বলেন কাল থেকে ৫ টাকা কমবে। ঠিক পরেরদিন ২ টাকা করে বাজারে দাম কমলো। এতেই প্রমাণিত হয় কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।’
ভোক্তাকন্ঠের সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে গুরুতর অপরাধীকে লঘুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। সিন্ডিকেটকারীদের শাস্তিমূলক কোনো আইনের অধীনে এনে শাস্তি প্রদান করা হয়নি। অথচ সবার আগে তাই করা উচিত ছিল।’
জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি সিরাজুজ্জামান বলেন, ‘ভেজাল বিরোধী অভিযানে জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে জোর দিতে হবে।’
সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন বলেন, ‘আমরা শুধু একচেটিয়া বাজারের কথা বলি, অলিগোপলির কথা বলি না। প্রকৃতপক্ষে দেশের প্রতিটি খাতের বাজার ব্যবস্থাপনায় এখন অলিগোপলি চলছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই অলিগোপলি বাজার ব্যবস্থা ভেঙে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রিণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটিরিং সেল আছে। কিন্তু বাস্তবতায় সেই সেলের কোনো কার্যক্রম নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি সকলকে সোচ্চার হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা আরও বলিষ্ঠ হওয়া উচিত।’
পোল্ট্রি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘পোল্ট্রি ব্যবসা এখন নিয়ন্ত্রণ করে মুষ্টিমেয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তাদের কারণেই ১ লাখ ৬০ হাজার পোল্ট্রির ফার্ম থেকে এখন ৬০ হাজারে পরিণত হয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ বাজারের সিণ্ডিকেট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু বাজারে পণ্যের মূল্য না কমে দিনদিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে চাল, ডিম, টয়লেট্টিজ সামগ্রী, ভোজ্য তেলসহ এমন কোনো পণ্য নাই যেখানে সিণ্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন যে মামলা করেছে, সেই মামলাগুলোকে ফৌজদারী মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি ‘
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনএস